ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হজে যেতে না পারলে বাড়ি ফিরবো না...

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
হজে যেতে না পারলে বাড়ি ফিরবো না... হজক্যাম্পে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দিশেহারা যাত্রীরা। ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: গত তিন দিন থেকে হজ ক্যাম্পে এসে বসে আছি। ভিসা পাসপোর্ট পেয়েছি, কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট পাচ্ছি না। এজেন্সির লোকদের কল করলে ধরে না। আমি এবং আমার স্বামী হজে যাওয়ার জন্য ছয় লাখ টাকা দিয়েছি। এখন যদি হজে যেতে না পারি, আর বাড়ি ফিরবো না। চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যাবো।

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং-১২৯) এজেন্সির হজযাত্রী আনোয়ারা পারভীন (৪৫)। নড়াইল জেলার কালিয়া থেকে আগত আনোয়ারার সঙ্গে হজে যাচ্ছেন তার স্বামী দীন মোহাম্মদও (৫৮)।


 
আনোয়ার‍া পারভীন বলেন, আমরা সর্বস্ব শেষ করে আল্লাহকে খুশি করার জন্য হজে যাওয়ার টাকা জমা দিয়েছি। এখন যদি হজে যেতে না পারি তাহলে এলাকায় গিয়ে কী হবে?
 
দীন মোহাম্মদ (৫৮) বাংলানি‌উজকে বলেন, আমরা এখানে এসে কয়েকবার এজেন্সির প্রতিনিধি শফিক সাহেবকে কল করেছি, কিন্তু ধরেন না। এখানে আসেনও ন‍া।
 
কাগজপত্র নিয়ে ফ্লাইটের টিকিটের অপেক্ষায় হজযাত্রীরা।  ছবি: কাশেম হারুন
রাজধানীর আশকোনায় শনিবার (২৬ আগস্ট) হজ ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, কেবল আনোয়ারা পারভীন এবং দীন মোহাম্মদই নন,  শানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ১৮ জন এখনও কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাননি।  

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
 
এজেন্সির টিম সমন্বয়কারী (এজেন্সির পক্ষে টাকা উত্তোলনকারী) দাবিদার শফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমি তাদের থেকে টাকা নিয়ে এজেন্সিকে দিয়েছি। কিন্তু এজেন্সি এখন আরও টাকা দাবি করছে। এজন্য আমি ২৪ আগস্ট হজ অফিসে এজেন্সির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। হজ অফিস থেকে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
 
হজ ক্যাম্প ঘুরে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন এজেন্সির আড়াইশ’র বেশি হজযাত্রী টিকিটের অভাবে হজে যেতে পারছেন না। এদের মধ্যে কোনো কোনো এজেন্সির মালিক লাপাত্তা হয়ে গেছেন। কোনোভাবেই তাদের নাগাল পাচ্ছেন না হজযাত্রীরা।
 
ইকো এভিয়েশন’র (লাইসেন্স নং-১৩৪৮) ১৯৩ জন,  আল-বালাদ’র (লাইসেন্স নং-৬৩৩) ২১ জন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’র (লাইসেন্স নং-১০৪১) ৩০-৩৫ হজযাত্রী টিকিট না পেয়ে সৌদি আরব যাত্রা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

এসব যাত্রীদের মধ্যে আবার অনেকেই দুই-তিন বছর আগে টাকা দিয়ে রেখেছেন এজেন্সি মালিকদের। কিন্তু এখনও হজে যেতে পারেননি।
 
মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’র হজযাত্রী জরিনা বেগম (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, এজেন্সিকে ২০১৬ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি হজে যাওয়ার জন্য। এ বছর স্বামী এবং আমি মিলে যেতে চেয়েছি, এ জন্য আরও ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু বারবার ফ্লাইটের তারিখ দিলেও আমরা এখনও টিকিট পাইনি।
 
তিনি বলেন, এখন এজেন্সির লোকদের মোবাইল বন্ধ। অন্যদের মাধ্যমে ভিসা-পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিয়ে বলছে, আমরা যেন নিজেদের টাকায় টিকিট করে চলে যাই। কিন্তু এজেন্সির লোক আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। এখন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা লাগবে শুধু টিকিট করতে। কোথায় পাবো এই টাকা?
 
দুর্ভোগের চরম সীমায় হজযাত্রীরা।  ছবি: কাশেম হারুন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বাংলানিউজকে বলেন, এজেন্সি মালিকরা যে দেশেই থাকুক, যেসব যাত্রীদের ভিসা হয়েছে তাদের হজে নিতে হবে। অন্যথায় ব্যর্থ এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।
 
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যাগুলো সাধারণত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সৃষ্টি হয়। তবে কিছু এজেন্সির কারণে প্রতিবছর হাবের দুর্নাম হয়। আমরা এটা সহ্য করবো না। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৭
এসআইজে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।