টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ও ভাতার কার্ড পেতে এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।
৪ সন্তানের বাবা হতদরিদ্র সিরাজ মোল্লা নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পাঁচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার আশায় মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) নড়াইল সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের বারান্দায় বসেছিলেন সিরাজ মোল্লা।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আকবরের কাছে অনেক ঘুরাঘুরির পর একটি কার্ড দিতে চেয়েছেন। সে আশায় দুই ঘণ্টা ধরে মেম্বারের অপেক্ষায় এ বারান্দাতেই বসে আছি’।
সিরাজ জানান, ৩০ বছর আগে তার মুখে ছোট একটি আঁচিল (ছোট ফোড়া) হয়। স্থানীয় এক ডাক্তারের পরামর্শে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খান। পরে আস্তে আস্তে সেটি বড় হতে থাকে।
অবস্থার অবনতি হলে তিনি নড়াইল, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গার অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখান। কোনো ডাক্তারের পরামর্শ-ওষুধেই এ রোগ সারেনি।
চিকিৎসকরা এখন সিরাজ মোল্লাকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। সেজন্য প্রয়োজন তিন লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু অভাবের সংসারে তিনবেলা খাবারই জোটে না অসহায় এই বৃদ্ধ ও তার পরিবারের সদস্যদের। অপারেশনের টাকা জোগাড়ে তাই জীবন সায়াহ্নে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সিরাজ মোল্লা বলেন, ‘যখন শরীরে শক্তি ছিল, তখন পেশায় গাছি ছিলাম। নারকেল ও সুপারি গাছ পরিস্কারের কাজ করে সামান্য আয়-রোজগার করতাম। ৪ ছেলেকে খাইয়ে-পরিয়ে কোনো রকমে বড় করেছি। টাকার অভাবে কোনো সন্তানকেই লেখাপড়া শেখাতে পারিনি’।
‘এখন ২ ছেলে বিয়ে করে তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকে। ছোট ২ ছেলেসহ এখন আমার ৪ জনের সংসার। ছেলে দু’টিই দিনমজুর। তাদের সামান্য রোজগারে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে আমাদের’।
টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পেরেই তার এই করুণ পরিণতি বলেও জানান সিরাজ মোল্লা।
তিনি আরও বলেন, ‘বাবার রেখে যাওয়া ২০ শতক জমি ছাড়া সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। বসত-ভিটার এই ২০ শতক জমি বিক্রি করলেও অপারেশনের টাকা হবে না’।
মৃত্যুর আগে একদিনের জন্য হলেও সুস্থ শরীরে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান সিরাজ মোল্লা। সমাজের হৃদয়বান মানুষের কাছে তাই অপারেশন ও চিকিৎসা করাতে আর্থিক সহায়তার আকুল আবেদন জানিয়েছেন অসহায় বৃদ্ধ মানুষটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
ইএস/এএসআর