ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ভালো নেই, তবু বেঁচে আছি!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
‘ভালো নেই, তবু বেঁচে আছি!’ ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাভার (ঢাকা): “মঞ্চের একেবারে সামনে ছিলাম। সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য শেষে নেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শেষ করলেন। ঠিক তখনই বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলো, আমি লুটিয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম’ তারপর আর কিছুই বলতে পারি না।নিজেকে আবিষ্কার করলাম কোলকাতার একটি হাসপাতালে।”

২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টের ভয়াল ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দেন তৎকালীন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন। বর্তমানে যিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগে(ঢাকা জেলা উত্তর)সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে দেহে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন তাদেরই একজন মাহবুবা পারভীন। গ্রেনেডের হামলায় মৃত প্রায় পারভীন বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, কেউ তখন বুঝতেই পারছিলেন না।
মাহবুবা পারভীন, ছবি: বাংলানিউজ
মাহবুবা পারভীন গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে পড়ে থাকেন। ছয় ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আশিস কুমার মজুমদার সেখানে লাশ শনাক্ত করতে গেলে মাহবুবা পারভীনকে জীবিত দেখতে পান। এর প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে।

মাথার দুটি স্প্লিন্টারের ব্যথায় মাঝেমধ্যেই পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন। ১৩ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন পারভীন। ২১ আগস্ট এলেই এর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে তার। এখনো আঁতকে ওঠেন, কান্নায় চোখমুখ ভিজে যায়। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায়।

'ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না। ইচ্ছে করে দলের হয়ে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করি। মাঝেমাঝে মন চায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে যোগ দিতে ছুটে যাই। কিন্তু শরীর সাপোর্ট করে না। শরীরে এখনো বোমার স্প্লিন্টার। মাঝেমধ্যেই ক্ষত স্থানগুলো থেকে বেড় হয় রক্ত। ’

আক্ষেপ করে বলেন,“ভালো নেই। তবু  বেচেঁ আছি!”

সাভারের ব্যাংক কলোনির নিজের টিনশেড বাড়ির অবস্থা খুবেই নাজুক। বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় ঘর। দুই ছেলে আসিফ পারভেজ ও রুশাদ জোবায়েরকে নিয়ে তাই সাভার বাজাররোড এলাকায় একটি বাসা ভাডা নিয়ে থাকেন। চলাফেরা করতে হয় এখনো লাঠিতে ভর দিয়ে।

স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট(অব.)এম এ মাসুদ সম্প্রতি মারা গেছেন। এখন তিনি অবলম্বনহীন, সঙ্গীছাড়া মানুষ। পুরাতন স্মৃতি হাতড়ে ফেলে আসা দিনের ছবিগুলো দেখতে থাকেন বারেবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। প্রতিমাসে শুধু ঔষধ বাবদই খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ তো আছেই। এছাড়া দলের নেতাকর্মীরাও কোনোদিন তার খোঁজটুকু নেয় না। করে না কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা।

এতো কিছুর পরও একটাই সান্ত্বনা তার: নেত্রী শেখ হাসিনা ভালো আছেন। তিনি ভালো থাকলে বাংলাদেশও ভালো থাকবে। তবে বেচেঁ থাকতেই দেখে যেতে চান এঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এসএইচএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ