ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

১৩ বছরেও শেষ হয়নি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
১৩ বছরেও শেষ হয়নি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার ২১ আগস্ট (ফাইল ফটো)

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম নৃশংস বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। বার বার আদালত পরিবর্তন, উচ্চ আদালতে আসামিদের বিভিন্ন আবেদনসহ নানা কারণে মামলাটির বিচারকাজে বিলম্ব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষগ্রহণ শেষ হওয়ায় চলতি বছরেই শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যা ও দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন।

অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা, তিনিসহ আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা দু’টি মামলার বিচারকাজ চলছে। হত্যা মামলায় ৫২ জন আসামির মধ্যে ৩ জনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামি সংখ্যা ৪৯ জন। অন্যদিকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটির আসামি ৪১ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ জনে। হত্যা মামলার ১১ জনকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলার অভিযোগের দায় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ (চার্জ) গঠনের সময়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়েছে। বর্তমানে আসামিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে, সাক্ষ্য দিচ্ছেন আসামি মাওলানা শেখ আবদুস সালামের পক্ষের সাফাই সাক্ষী। এর মধ্যে ১১ জনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ও বুধবার (২৩ আগস্ট) পরবর্তী সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় প্রসিকিউশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান। রয়েছেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলও।

বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণ সম্পর্কে আইনজীবীরা জানান, মামলাটির দুই দফা তদন্তে সময় লেগেছে ৬ বছর। তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছেন ছয়বার। আসামিপক্ষ বিভিন্ন সময় হাইকোর্টে যাওয়ায় ২৯২টি কার্যদিবস তথা প্রায় দু’বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। প্রায় ৮ মাস ধরে মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির পর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।

এছাড়াও শুরুর দিকে মামলার তদন্তের নামে এর আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। অনেক আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে। জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও মামলাটিতে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।

২০০৮ সালের ১১ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে প্রথম চার্জশিট দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র সহকারী সুপারিন্টেনডেন্ট ফজলুল কবির।

চার্জশিট দাখিলের পর মামলার বিচার শুরু হয় ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত মাত্র ৭ মাস ১২ দিনে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

কিন্তু, ২০০৯ সালের ০৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, এর মদদদাতা, সরবরাহকারী ও পরিকল্পনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকায় অধিকতর তদন্তের আবেদনটি করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

এবার মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।   ১৩ আগস্ট থেকে তিনি মামলাটির অধিকতর তদন্ত শুরু করেন। ২০১১ সালের ০৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের মধ্য দিয়ে তদন্ত শেষ হয়। দুই দফায় তদন্তে সময় লাগে ৬ বছর।

সম্পূরক চার্জশিটে আসামি হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ৩০ জন। এতে আগের ২২ জনসহ মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগ গঠন করে ফের বিচার শুরু হয়।

মামলার ৫২ আসামির মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও জেএমবির সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার‌্যকর করা হয়েছে।

বাকি ৪৯ জনের মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ এবং সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামসহ আটজন জামিনে আছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।

মামলার আটজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১,২০১৭
ইএস/এমআই/ওএইচ/এএসআর

** 
কী ঘটেছিল সেই দিন?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।