ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিকল্প নেই তাদের সামনে!  

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
বিকল্প নেই তাদের সামনে!   বিড়ি কারিগর হালিমা বেগম- ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ থেকে: বয়সের ভারে শরীর ন্যুজ্ব হয়ে এসেছে। পায়ের কদম ফেলছেন এক জায়গায় গিয়ে পড়ছে অন্য জায়গায়, কানেও ঠিকমতো শুনতে পান না। তবুও দমাবার পাত্রী নন হালিমা বেগম।

মানুষের কাছে হাত পাততে চান না, কাজ করেই খেতে চান । চালিয়ে নিচ্ছেন চল্লিশ বছরের পেশা বিড়ি তৈরির কাজ।

যদিও এখন আর আগের মতো তার হাত চলে না। আগে দিনে ৪ হাজার বিড়ি বানাতে পারতেন। এখন তিন হাজার বানাতেও হিমশিম খেতে হয় তাকে।

হালিমা বেগম টলতে টলতে প্রবেশ করলেন সামাদ বিড়ির কারখানায় (সিরাজগঞ্জ)। কাঁখে তার ঢালায় ভর্তি বিড়ির ঠোঙ্গা। যেগুলো তামাক ভরে বিড়িতে পরিণত হবে। স্বামী আব্দুল জলিল শেখ ১৯৭১ সালে তাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

অকাল বিধবা হালিমা বেগম ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মামার বাড়িতে আশ্রিত হন। মামার বাড়িতে থাকার সময় কাজ নেন বিড়ির কারখানায়। সেই থেকে আজ অবদি কাজ করে যাচ্ছেন। ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর তার মামা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। আবার ঠিকানা হারা হন হালিমা বেগম।

এবার ঠাঁই হয় বিধবা মেয়ের সংসারে। মা-মেয়ে এক সঙ্গে কাজ করেন সামাদ বিড়ির কারখানায়। মোটামুটি চলে যাচ্ছিলো তাদের সংসার। কাজ করলে টাকা, না হলে নেই। দৈনিক আয় হতো এক’শ বিশ টাকা। সপ্তাহে ৬দিন কাজ করে ৭’শ ২০ টাকা পেতেন। এ ভাবেই জীবনটাকে চালিয়ে নিতে অভ্যস্ত করেন।

কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভূমিহীন এই পরিবারটির সুখে হানা দেয়, বাড়তে থাকে কষ্ট। যখন তাদের আয় বাড়ার প্রয়োজন ছিলো, তখন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে আয়। বিড়ির বেঁচাকেনা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দেন মালিক হাজী ইউসুফ আলী। আগে কাজ হতো সপ্তাহে ৬ দিন। আর এখন কাজ হয় সপ্তাহে মাত্র দুই হতে তিন দিন। অর্থাৎ অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে তার আয়।

আর এই অর্ধেক আয় দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংসার। যে বয়স অন্যকাজ করার কথা ভাবতেও পারেন না। আবার করতে চাইলেই যে পাবেন সে ভরসাও পান না। এমনকি তাকে কেউ কাজও দিবে সে আশাও করতে পারেন না।

এই আয় দিয়ে যখন ত্রাহী অবস্থা, তখন সামাদ বিড়ির মালিক নাকি বলেছেন, সবাইকে কাজ খুঁজে দেখতে। সরকার চেঁপে ধরেছে, বিড়ি আর সিগারেটের দাম এক সমান করতে চাচ্ছে। তাতে কোম্পানি বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।  

হালিমা বেগম ও তার মেয়ে নাজমার বুকে এ কথা সেলের মতো বিঁধেছে, সব সময় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সত্যি সত্যি বিড়ি বন্ধ হয়ে গেলে কি করবেন ভাবতে পারছেন না। সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছে, বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করে দেওয়ার। যতদিন না বিকল্প আয়ের পথ তৈরি হচ্ছে ততদিন বিড়ি বন্ধ না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
হালিমা বেগম
হালিমা বেগম বলেন, বিড়ির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। না হলে তাদের আত্মহত্যা করতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।

হালিমা বেগম শুধু একা নন। সিরাজগঞ্জে এ রকম শতশত বৃদ্ধা রয়েছে যারা বিড়ি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এমনিতেই আয় কমে যাওয়ায় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তার উপর যদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে তাদের মরে যাওয়া ছাড়া কোন গন্তান্তর নেই বলে দাবী করেছেন।

এ বিষয়ে সামাদ বিড়ির মালিক হাজী ইউসুফ আলী বাংলানিউজকে জানান, বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। অর্থমন্ত্রী বারবার হুমকি দিচ্ছে বিড়ি বন্ধ করে দিবে। ট্যাক্স বাড়িয়ে বিড়ির দাম কমদামী সিগারেটের সমান (২৭ টাকা) করা হয়। তাহলে মানুষ বিড়ি কিনবে কেনো। আর মানুষ না কিনলে আমরা তৈরি করবো কেনো।

দিনদিন বিড়ি বিক্রি কমে যাচ্ছে। ট্যাক্স না বাড়লেও হয়তো একদিন বন্ধ হয়ে যাবে বিড়ি। কারণ নতুন প্রজন্ম বিড়ি ধরছে না। তারা সিগারেট টানছে। বিড়িকে তারা মর‌্যাদা হানিকর মনে করে বলে জানান হাজী ইউসুফ আলী।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এসআই/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।