সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ঢেকুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অদূরের একটি জঙ্গল থেকে কচুর শাক তুলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে তোলা অস্থায়ী ছাউনিতে ফেরার পথে এসব কথা বলছিলেন মধ্যবয়সী নারী রহিমা খাতুন।
মাইজবাড়ী গ্রামে তার থাকার ঘরের টুই পর্যন্ত বন্যার পানি।
জুলাইয়ের প্রথম বন্যায় তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অদ্যাবধিও কাজ জোটেনি তার। রহিমার সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কয়দিন ধইর্যা কি কষ্ট কইর্যা যে সংসার চালাইত্যাছি, তা কওয়া যাইবো না বাপু। গেদার বাপ হাটের দিন পঞ্চাশ ট্যাহার মাছ আনছিলো, তা দিয়া দুই ওয়াক্ত তরকারি রাইন্ধ্যা পোলাপান নিয়া খাাইচি। যদিল কাম-কাজ কইর্যা ট্যাহা অয় আবার হাটের দিন মাছ আইনবো। এ কদ্দিন শাক-পাতা দিয়াই চলা লাইগবো।
রহিমা বলেন, কয়েকদিন আগে ১০ সের ইলিফের চাইল পাইচিলাম। তাই দিয়্যা কুনমতে সংসার চালাইচি। ওই চাইল দিয়্যা আর একদিন চইলবো। এরপর কি অইবো আল্লায় জানে। গেদার বাপে কাম খুঁইজব্যার গেছে। যদি কাম পায় তাইলে ভালো আর না পাইলে না খাইয়্যাই থাহা লাইগবো।
শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে ঢেকুরিয়া ওয়াপদা বাঁধে সরেজমিনে গেলে রহিমার মতো শত শত বানভাসীদের এমন চিত্রই দেখা যায়। তাদের তাবুতে গিয়ে দুপুরের খাবার মেন্যুতে দেখা যায়, কেউ আলুভর্তা, কেউবা চালকুমড়ো আবার কেউবা সকালের পান্তাভাত আর কাঁচা পেয়াজ দিয়ে সারছেন ভোজনপর্ব।
শতবছর বয়সী চুম্বুলী বেওয়া বলেন, ছওয়ালডো কয়দিন দইর্যা কাম খুঁইজাও পাইত্যাছে না। এইভাবে আর কদ্দিন যাইবো আল্লায় জানে।
স-মিল শ্রমিক ভুলু বলেন, মিলে পানি ওঠার কারণে কাম-কাজ বন্ধ আছে। ধার দেনা কইর্যা কুনোমতে সংসার চালাইতাছি। বাড়ি থেইক্যা পানি না নামা পর্যন্ত এইভাবেই চইলতে অইবো।
রফিকুল ইসলাম বলেন, নিজেরাই খাইব্যার পাই না, তার উপর গরুর জন্য খেড় কেনা লাগে। সমিতি থেকে দুই হাজার ট্যাহা সুদের উপর ধার কইর্যা চইলতাছি।
পান বিক্রেতা হারুন, দিনমজুর লুৎফর, বাবলু, ছবুরা বেগম, হাসিমন বেওয়াসহ বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া অনেকেই জানান, দুই দফা বন্যায় তারা নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় এদের কারও ঘরের চাল পর্যন্ত, কারো ঘরে কোমর পানি উঠেছে। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের কাজ না থাকায় পড়েছেন আরও বিপাকে। ১০ কেজি করে রিলিফের চাল পেয়ে তা দিয়ে ৭ দিনের ভাতের যোগাড় হলেও তরকারি যোগাড়ের মত পরিস্থিতি এদের কারও নেই। তাই একমুঠো ভাতের সাথে শাক, লতাপাতাতেই ক্ষিদের জ্বালা মেটাচ্ছে এসব মানুষ।
মাইজবাড়ী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লতা বেগম বাংলানিউজকে জানান, ঢেকুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এ অঞ্চলের প্রায় ২ শত বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এদের সকলেই হতদরিদ্র। এ এলাকার প্রায় সকলে বাড়িতেই পানি উঠেছে। তবে যারা স্বচ্ছল, তারা আশপাশের আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। আর দরিদ্র মানুষগুলোই বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে প্রথম দফায় ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো এলে এসব মানুষের মাঝে আবারও বিতরণ করা হবে। এছাড়াও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
আরআই