ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মার পানি ভাটিতে বাড়ছে, স্থিতিশীল একদিন পর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
পদ্মার পানি ভাটিতে বাড়ছে, স্থিতিশীল একদিন পর পদ্মার পানি ভাটিতে বাড়ছে, স্থিতিশীল একদিন পর

ঢাকা: দেশের উত্তরাঞ্চালরের বিভিন্ন জেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। তবে মধ্যাঞ্চলে বিশেষ করে পদ্মা নদীর পানি মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়লেও ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন করে আর বন্যার সম্ভাবনা নেই। মধ্যাঞ্চলের নদীর পানি ক্রমে নেমে গেলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।


 
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে।
 
গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। তবে পদ্মা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
 
পদ্মার পানি গোয়ালন্দে বিপদসীমার ১০৬ সে. মি., ভাগ্যকূলে ৪৯ সে. মি. ও সুরেশ্বরে ১৩ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় সুরেশ্বর ও ভাগ্যকুলে ৭ সে. মি. করে বেড়েছে পদ্মার পানি।
 
এদিকে বিপদসীমার উপরে থাকা যমুনার পানি ক্রমাগত কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরবাদে ২৭ সে. মি., সারিয়াকান্দিতে ২৪ সে. মি., কাজিপুরে ২২ সে. মি. ও আরিচায় ৩ সে. মি. করে কমেছে।
 
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকবে এবং কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল হয়ে যাবে বলে জানায় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।
 
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, দেশের ৯০টি সমতল স্টেশনের মধ্যে এখনো ২৮টির উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 
নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যমুনার পানি গত ১৭ আগস্ট থেকে কমা শুরু করেছে। তা এখন দ্রুত নেমে যাচ্ছে।
 
আর পদ্মার পানি আজ (শনিবার) দুপুর থেকে উজানের গোয়ালন্দ পয়েন্টে কমা শুরু করেছে। প্রথম দিকে একটু ধীর কমবে। পরে দ্রুই পদ্মার পানি কমবে।
 
বিশেষ বন্যা সতর্কীকরণ বুলেটিনে (নং-৮) বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি সমতল নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে হ্রাস অব্যাহত আছে।
 
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে। তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার অববাহিকার নদীর পানি  হ্রাস অব্যাহত রয়েছে, এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বর্তমানে বিপদসীমার প্রায় ৪৮-১১৬ সে. মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি উজানের (গোয়ালন্দ) পয়েন্টে স্থিতিশীল এবং ভাটির (মুন্সিগঞ্জের-ভাগ্যকূল এবং শরীয়তপুরের সুরেশ্বর) পয়েন্টে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টায় উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
 
পূর্বাভাস ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশের আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ১৬ সে. মি. পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায়  হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে, তবে এই নদীর পানি বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় কমে আসছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। মেঘনা অববাহিকার নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়  হ্রাস অব্যাহত থাকবে।

দেশের উত্তর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর,রাজবাড়ী, মুঞ্জিগঞ্জ,শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছু জায়গায় স্থিতিশীল এবং কিছু জায়গায় অবনতিশীল থাকবে, যা পরবর্তীতে স্থিতিশীল হয়ে আসবে। গঙ্গা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 
মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের ৫টি নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সে. মি. হতে ১২০ সে. মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 
ক্ষয়ক্ষতি
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭টি জেলায় ১৫৪টি উপজেলায় এক হাজার ৩৮টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা ছয় হাজার ৬৮০টি। ১৩ লাখ ২২ হাজার ২৮১টি পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ জন। ১৪ জেলায় ৯৩ জন মারা গেছেন।
 
শনিবার (১৯ আগস্ট) সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
 
তিনি জানান, এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৪১টি। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ চার লাখ ৬৮ হাজার ৬০৯ হেক্টর। হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট হাজার ৩৪২টি। রাস্তাঘাটের মধ্যে ৩১ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই হাজার ৭৮৯ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭৯ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৫৫৬টি।
 
বন্যায় ৯৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখ ৯৭ হাজার ২৫৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ২০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ছয় কোটি ৫০ লাখ নগদ টাকা এবং ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।