ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাড়িঘর ভাসায়া নিয়া গ্যাছে, পানি কমলে কই যামু!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
বাড়িঘর ভাসায়া নিয়া গ্যাছে, পানি কমলে কই যামু! কুড়িগ্রাম : বন্যার্ত সর্বস্ব হারানো পরিবার:ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: হঠাৎ কইরা বানের পানি আইসা সব ভাসাইয়া নিয়া গ্যছে। পানির ঠ্যালায় চৌক্ষের পলকে চৌক্ষের সামনে বাড়িঘর সব ভাইঙ্গা ভাসাইয়া নিয়া গ্যাছে।সেই থেইক্যা ঘরবাড়ি হারানো ২৩টা বাড়ির মানুষ নৌকার উপর খাইয়া না খাইয়া কোনমতে জীবন কাটাইতাছি। ৮ দিন ধইরা পানি উপর ভাসতাছি। কোন রকমে চিড়া-গুড় খাইয়া বাঁইচা আছি।

শনিবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুর্গম বতুয়াতলী চরের মশালের চরের ঘর-বাড়ি হারা জমিলা বেগম (৫০) এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন বিভীষিকাময় কষ্টের দিনগুলোর কথা।

কুড়িগ্রাম জেলাশহর থেকে নৌপথে দেড় ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দুর্গম বতুয়াতলী চরে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার উপর অনেকটা গাদাগাদি করে কোনো রকমে দিন-রাত পার করছেন বানভাসী মানুষ।

চারিদিকে পানি আর পানি। তাই জ্বালানির অভাবে রান্নাও করতে পারছেন না তারা। কোনোমতে শুকনা খাবার কোনো বেলা খেয়ে, আবার কোনো বেলা না খেয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এখানে ব্রহ্মপুত্রের ঢলের পানি চোখের পলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ১৮টি পরিবারের সহায়-সম্বল সব।

সর্বস্ব হারানো বতুয়াতলী চরের বাসিন্দা আছির উদ্দিন(৬৫), হাসান আলী(৫০) সহ আরো অনেকে জানান, ৭/৮দিন আগে উজান থেইক্যা পানি আইসা চোখের পলকে ২৩টা বাড়ি ভাইঙ্গা নিশ্চিহ্ন কইরা দিয়্যা গ্যছে। সেইদিন থেইকা এক কাপড়েই পোলাপান লইয়া নৌকায় উইঠ্‌ছি। সহায় সম্বল কিছুই সাথে আইনবার পারি নাই।

তারা আরো জানান, এ পর্যন্ত একবার ১০ কেজি কইরা চাউল দিছে। খড়ি-খ্যাড় (জ্বালানি কাঠ বা খড়-কুটো) কিছু নাই। কি দিয়া রাইন্ধা খাই। পোলাপান লইয়া শুকনা চিড়া-গুড় খাইয়া দিন পার করতাছি।

পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ বালাডোবার চরের ১৭টি পরিবারের কপালেও নেমেছে একই দুর্ভোগ। এই চরের আমীর হামজা(৭০) বাংলানিউজকে জানান, বানের পানি তার নিজের ৩টি ঘরসহ ১৭টি পরিবারের অন্তত অর্ধশত ঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

‘পানি নামলেও আমাগোর যাওনের কোনো জায়গা নাই। ‘—এভাবেই অসহায় আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল এই বৃদ্ধের কণ্ঠে।

দক্ষিণ বালাডোবার চরের আহাম্মদ আলী(৬৫), ফরিদা বেগম (৪৫) বাংলানিউজকে জানালেন, বাড়ি-ঘর যে নতুন কইরা বানামু তারও কোনো উপায় নাই, ট্যাহা পামু কই। ৭/৮ দিন থেইকা পাশের ফকিরের চর আবাসনে কোনো রকমে মাথা গুঁইজা পইড়া আছি। পানি কমলে যে কই যামু, আল্লাই জানে!

উলিপুর উপজেলার বোগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়রম্যান বেলাল হোসেন মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, দক্ষিণ বালাডোবা ও বতুয়াতলী চরের অন্তত অর্ধশত পরিবারের ঘর-বাড়ি বন্যার পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে। পরিবারগুলো এখন নৌকার ওপর খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। পানি কমে গেলেও তাদের বাড়িতে ফেরার কোনো উপায় নেই। অপ্রতুল ত্রাণ তৎপরতার কারণে বন্যা দুর্গত বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমলেও এখনো ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা ছুঁয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা চললেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় দুর্গম এলাকার অধিকাংশ বানভাসীর কপালে তা জুটছে না।

বন্যাদুর্গত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটছে বানভাসীরা। সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতায় দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যা দুর্গতদের ভাগ্য জুটছে না কিছুই।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ খেকে এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৯শ ৫১ মেট্রিক টন চাল এবং দুই হাজার শুকনো খাবার-প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হলেও তা ৪ লক্ষাধিক বানভাসীর জন্য অপ্রতুল।

বন্যার্ত অসহায় মানুষদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার(২০ আগস্ট) কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা রাণী লক্ষী প্রিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এফএএস/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।