এই গেট পেরিয়ে একটু সামনে এগুলেই গাড়ির ভেঁপু যে কম, তা বোঝা গেল টুং-টাং শব্দ কানে আসার কারণে। এ শব্দের একটা ছন্দ রয়েছে।
দু’জন ব্যক্তি লোহাকে পালাক্রমে পিটিয়ে কাঙ্খিত গড়ন দিচ্ছেন। তাই তৈরি হচ্ছে শব্দের এ ছন্দ। তবে অনেকগুলো তাল একসঙ্গে পাওয়া গেল। তার অর্থ আলাদা আলাদা জায়গা থেকেই আসছে এই শব্দ। তাতে বোঝার অবকাশ রইল না, ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামার ঘরগুলো।
মোটরসাইকেল থামিয়ে হাতের ডান দিকে কয়েক গজ যেতেই চোখে পড়লো দুটো সারি। তাতে কালি, ময়লা লেগে থাকা নয়টি ঘর। একটিতে চারটি ঘর, অন্যটিতে পাঁচটি। এগুলো দেখতে পোড়া ঘর বলেই মনে হয়। আসলে পোড়া নয়, কয়লা পোড়ার ধোঁয়ায় এগুলো এমন চেহারা পেয়েছে।
দিন পাল্টেছে আগেই। তাই হাতে টানা বাতাস দেওয়ার যন্ত্রের বদলে এসেছে বৈদ্যুতিক মটর। তবে বিদ্যুৎ যদি না থাকে, তাই আগের ব্যবস্থাটিও রাখা আছে।
বিশেষ কায়দায় বানানো যন্ত্র থেকে একটি নলের ভেতর দিয়ে বাতাস ঢুকছে কয়লায়। তাতে আগুন থাকায় আগ্নেয়গিরির লাভার মত লাল হয়ে উঠছে। কামার একটা চিমটা দিয়ে লুহার টুকরা ডুবিয়ে দিচ্ছেন এতে। মিনিট খানেকের মধ্যেই লোহার রঙ হয়ে ওঠছে ওই লাভার মতোই। আর তখনই একট বড় লৌহখণ্ডের ওপর ওই তপ্ত লোহা রেখে পেটাচ্ছেন কামার আর তার সহযোগী। ফলে উৎপন্ন হচ্ছে ছন্দ-টুং-টাং, টু-টাং। এভাবে কয়েকবার তপ্ত করা আর পেটানোর পরই গড়ন পেয়ে যাচ্ছে-চাকু, বটি, দা কিংবা চাপাতি। মাঝখানে লোহাকে ঠাণ্ডা করতে আবার পানিতেও চুবানো হয় প্রয়োজনমত।
এদিকে দরদর করে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে কামারের। ব্যস্ত হাতে তারা সামাল দিচ্ছেন পশু কাটার উপকরণ তৈরির কাজ। কেননা, ঘনিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা। অনেক অর্ডার এসেছে। ফলে দম ফেলার ফুসরত নেই। একমনেই কাজ করে যাচ্ছেন।
চূয়াডাঙ্গার মো. রাসেল ১১ বছর ধরে গাবতলী হাটে কামারের দোকান চালাচ্ছেন। এলাকাতেও তিনি একই কাজ করতেন। বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের কেউ এ পেশায় নেই। এটা ভাল পারি, তাই করি। কাজ তো কাজই।
সামনে ঈদ। তাই কাজের ব্যস্ততা অনেক। অর্ডারের কাজই এখন বেশি। তিনি জানান, ৬শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় দা-বটি। এক্ষেত্রে বটি ৬শ’ টাকা, ছুরি ৯০ থেকে ১শ’ টাকা, চাপাতি ৬শ’ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হয়।
পাশের ঘরের কামার রবিন বলেন, সারাবছর তো তেমন কাজই থাকে না। ঈদে ভাল ব্যবসা হচ্ছে। প্রচুর কাজ। তাই একটু পরিশ্রমও বেশি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম