কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্র জানায়, গরু মোটা-তাজাকরণে ব্যবহৃত স্টোরয়েড শনাক্তকরণে ২৪ বাক্স ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এ পদ্ধতিতে পশুর রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা এবং প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মোটা গরু মানেই অসুস্থ নয়। এখন অর্গানিক খাবার খাইয়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে গবাদিপশুকে মোটা-তাজা করা হচ্ছে। তবে এর আগে কোরবানির মোটা গরুর অতিরিক্ত ঝিমানো, পায়ের পাতা ফোলা, শরীরে ব্যথা, ক্ষ্যাপাটে ভাব, শক্তি কম, মুখ দিয়ে লালা পড়া, জিহ্বা বের হয়ে থাকা, চোখের পাতা ফোলা, শরীরে স্পর্শ করলে আঙ্গুল বসে যাওয়া ও শরীর ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখে ধারণা করা হতো যে, মোটা-তাজা করার ট্যাবলেড স্টোরয়েড খাওয়ানো হয়েছে।
তবে এ ধারণা ছিল শুধুই অনুমান নির্ভর, যা অনেক সময় ভুলও হতে পারে। এটি বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতিও নয়। আর এ ভুলে ধূলিস্যাৎ হতে পারে একজন চাষি অথবা খামারির স্বপ্ন।
কারণ, অনেক সময় কোরবানির পশুকে অতিরিক্ত হাঁটানো, অপরিচিত স্থানে নিয়ে আসা বা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হলেও এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. আব্দুল হালিম বাংলানউজকে বলেন, ‘প্রযুক্তি ও ওষুধপত্রের অভাবে এর আগে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্টোরয়েডের ব্যবহার সনাক্ত করা যায়নি। ল্যাবে রক্ত-ইউরিন পরীক্ষার এ পদ্ধতিও এর আগে বাংলাদেশে প্রয়োগ হয়নি। এফএও এবারই প্রথম আমাদের বিনামূল্যে এ ধরনের ব্যয়বহুল ওষুধ ও ল্যাবের অবকাঠামোগত সুবিধা দিয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘আগে মোটা গরুর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে ধারণা করতাম যে, হয়তো স্টোরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ ধারণা অনেক সময় সত্য নাও হতে পারে’।
‘আর এখন কোনো মোটা গরুর নানা লক্ষণ দেখে সন্দেহ হলে সরাসরি রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারবো- স্টোরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে, না হয়নি’।
তিনি আরও বলেন, ‘রক্ত পরীক্ষা করে চাষি, খামারি ও ক্রেতা কারোর ঠকার কোনো কারণ নাই। যেসব অসৎ লোক অবৈধভাবে গরু মোটা-তাজা করবেন, শুধু তারাই এবার থেকে ধরা পড়বেন’।
স্টোরয়েড মূলত হাঁপানি রোগের ওষুধ। কিন্তু আগে ডেক্সামেথারসন, ডেকাসন, বেটামেথার্সন, পেরিঅ্যাক্টিনের মতো এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হতো পশুকে মোটা-তাজা করতে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা জানান, স্টোরয়েড পশুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে। পানি শরীর থেকে বের হতে দেয় না। এ পানি গরুর মাংসে চলে যায়। যার কারণে গরুকে মোটা-তাজা দেখা যায়। এ ট্যাবলেটের কাযর্কারিতা ৮-১০ দিন থাকে। ট্যাবলেটটির অতিরিক্ত ব্যবহারে গরুর কিডনি বিকল হয়ে যায়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে ও ঝিমানি ভাব হয়।
এ ট্যাবলেট খাওয়া গরু ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই বিক্রি করতে হবে। না হলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্টোরেয়েড ব্যবহার করা গরুর মাংস খেলে মানবদেহেও নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে।
এদিকে গত বছরের মতো এবারের ঈদেও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তদারকি কার্যক্রম থাকবে।
প্রতিটি হাটে একটি করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে, যেখানে দু’জন পশু চিকিৎসক (ভেটেনারিয়ান) ও দু’জন করে সহকারী থাকবেন। প্রতিটি টিমকে ওষুধ, গামবুট, অ্যাপ্রোন, মাস্ক, গেঞ্জি ও ক্যাপসহ প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী দেওয়া হবে। জনসচেতনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিং ও মাইকিং করবে টিমগুলো।
অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়সহ মাঠ পর্যায়ের দফতরগুলোর মাধ্যমে এসব সেবা নিশ্চিত করা হবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটারিংয়ে আবার কাজ করবে অধিদফতরের চারটি এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর