শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে কথা হয় মাইঝাইল গ্রামের ওই বৃদ্ধার সঙ্গে।
কথা বলতে চাইলে দুঃখে ভরা জীবনের গল্প শুরু করেন তিনি।
“বান আইস্যা মরার উপর খড়ার ঘা অইয়্যা খাড়াইচে। বাড়ির মধ্যে মাজা জল, আর ঘরের মধ্যে হাঁটু জল-অই জলের মধ্যেই ইট পাইড়া চৌকি উঁচা কইরা মায়ে-বেটি আর এক নাতনি মিল্যা থাইকত্যাছি”, বলেন স্বরস্বতী।
পানিতে ভিজে ভিজে এখানে কেন এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হুইনল্যাম এই স্কুল মাঠে রিলিপ দিবো। তাই হুইন্যা বেটি ব্যাগ দিয়্যা দিচে। যে ভিড় দেইখত্যাছি বাবা ওই রিলিফ নিব্যার যামু কেবা কইরা?”
স্বরস্বতী রানী জানান, মাইঝাইল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ। বরাবর রাস্তার কোথাও হাঁটু পানি কোথাও কোমর পানি-আবার কোথা পায়ের পাতা পর্যন্ত পানি। এসব পানি মাড়িয়ে ত্রাণ নিতে এসেছেন তিনি। অপেক্ষা করছেন কখন ভিড় কমবে। তারপর সাহায্য নিয়ে ফিরে যাবেন মেয়ের নাতনির কাছে।
একই স্থানে ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন মাইঝাইল গ্রামের রেবা রানী, তারাবানু, বৈলগাছীর স্বামী পরিত্যক্তা জহুরা, ময়জান বেওয়া, রাজাপুর গ্রামের আমেনা বেগম, জামেলা বেওয়া, চক মকিমপুর গ্রামের গোলেনুর বেওয়া, ছমিরন, ফুলমালা, মোমেনা বেগম ও আলেয়া বেগমসহ প্রায় শতাধিক বয়োবৃদ্ধা ও মধ্যবয়স্ক নারী।
এদের কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ বিধবা আবার কেউবা অসুস্থ স্বামী নিয়ে সংসার করছেন। অনেকের সন্তান রয়েছে-তারা সবাই তাঁতশ্রমিক। বন্যার কারণে সকল তাঁত কারখারা বন্ধ থাকায় অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন তারা। দুই থেকে তিন মাইল পথ পার হয়ে এরা ত্রাণের জন্য এসেছেন-যাতে দু এক বেলা খাবারের যোগান হয় সেই আশায়।
চক মকিমপুরের ছমিরন বেগম জানান, ঘরে তার অসুস্থ স্বামী। কোনো কাজ করতে পারেন না। ছমিরন নিজেই তাঁতীদের বাড়ীতে সুতা কেটে সংসার চালান। তাঁত ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় ছমিরনের হাতে কোনো কাজ নেই। তাই পরিবার নিয়ে এরকম না খেয়েই দিনাতিপাত করছেন।
বৃদ্ধা রেখা রানী অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যার কারণে কোন বাড়িতে কাজ নেই। তাই রেখা রানীর চুলাও দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, এ ইউনিয়নের বেশকিছু হতদরিদ্র পরিবার রয়েছে। চলতি বন্যায় এখানকার বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলারদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদ থেকে এ ইউনিয়নে ইতিমধ্যে ৮ মেট্টিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শনিবার থেকে আরও ৬ মেট্টিক টন চাল বিতরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, চলতি বন্যায় রাজাপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম পুরো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশই তাঁতশিল্প নির্ভর পরিবার। বন্যায় তাঁত ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এএম/এমজেএফ