এহন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য এহানে ঢুকেনি। এদিক আন্না-বান্না (রান্না) করার মতন (মতো) কোনো অবস্থানি নাই স্যার।
হঠাৎ এলাকায় পানি ঢুকে গেছে। ঘর-বাড়ি ঢুবচে। এহন যে বান্দত (বাঁধ) আশ্রম (আশ্রয়) নিচি, আজ সেটাও ভাঙ্গি গেইছে। এহন আতত (রাত) কোনটে থাকমো ছোল নিয়ে জানি না।
কথাগুলো বলছিলেন, চার দিন ধরে বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর হারিয়ে করতোয়া বাঁধে আশ্রয় নেয়া জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালুয়া গ্রামের সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, হামার (আমাদের) গ্রামত (গ্রাম) এহনও কোনো ত্রাণ সামগ্রী ঢোকে নাই। পানিতে গরু-বকড়ি (গরু-ছাগল) ভাসি গেছে। হামার খাদ্য খাবারের কোনো ব্যবস্থা নাই। আন্না-বান্নারও কোন উপায় (উপায়) নাই। এহন দিশে (দিক) খুঁজে পাচ্ছি না স্যার।
এদিকে, এ এলাকার বানভাসী মানুষদের অভিযোগ, চারদিন ধরে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে গেছে। অধিকাংশ মানুষ করতোয়ার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এখানে কোনো প্রকার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি। এমনকি জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত বানভাসীদের খোঁজ রাখেনি।
এদিকে, করতোয়া বাঁধের পাঁচ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া একটি পয়েন্টে ধসে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছেড়ে মানুষ অজানায় পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া বাঁধ ভাঙার কারণে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে, জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৭৪টি গ্রামের প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব মানুষের জন্য জেলায় ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
তাছাড়া বন্যায় ২১ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এক হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, গাছপালা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৫৮টি।
গাইবন্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বাঁধের ধস ও ভাঙন রক্ষায় কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের ৬শ’ ২৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মজুদ রয়েছে ৬৪ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া আরও ৫শ’ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ১৮ আগস্ট, ২০১৭
আরএ