বন্যা দেখা দেওয়ার পর থেকেই উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি রুটে রেল চলাচল বন্ধ। বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্বাভাবিক যান চলাচলে নেমে এসেছে ধীরগতি।
এই উদ্বেগের কারণে অনেক পরিবহনই ঈদকেন্দ্রিক তাদের সম্ভাব্য ট্রিপ প্রায় দেড়-দুই গুণ কমিয়ে ফেলেছে। এই ট্রিপ কমিয়ে ফেলায় অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশীদের অসন্তোষ বাড়লেও পরিবহন কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন, নির্ধারিত ট্রিপগুলোই তারা সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে।
এ বিষয়ে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর শ্যামলীতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে কথা হচ্ছিল পরিবহন কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. মোশাররেফ হোসাইনের সঙ্গে। তিনি কাউন্টারে বসে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম দেখভাল করছিলেন।
মোশাররেফ হোসাইন প্রথমেই টিকিট বিক্রি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার গাড়ির টিকিট এই কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়। শুক্রবার দেওয়া হচ্ছে ২৪ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সময়ের নির্ধারিত গাড়ির টিকিট।
বলেন, ‘গত ঈদে উত্তরবঙ্গ রুটে এই সময়ে আনুমানিক ৩০০-৩৫০ ট্রিপ চালিয়েছে হানিফ। এবার কমিয়ে ১০০-১৫০ ট্রিপের মধ্যে রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ীই দেওয়া হচ্ছে অগ্রিম টিকিট। ’
কেন কমিয়ে ফেলা হলো ট্রিপ? হানিফ এন্টারপ্রাইজের জিএম বলছেন, ‘একটি গাড়ি পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও বা রংপুর যাওয়া-আসা করতে অর্থাৎ একটা ট্রিপে সময় লাগছে ৩৬ থেকে ৪০ ঘণ্টা! আগে লাগতো ১৬ ঘণ্টা! ঈদে পশুর হাট, যানবাহনের বাড়তি চাপ, বন্যার কারণে সড়ক সংস্কার প্রভৃতি কারণে চাপ থাকবে, তাহলে কী হবে, সে তো অনুমান করাই যায়। ’
মোশাররেফ হোসাইনের দাবি, ‘বন্যায় সারাদেশের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বগুড়ার করতোয়া নদীর ওপর মহাস্থান ব্রিজ ও সিরাজগঞ্জের নলকা ব্রিজই পার হতে আট ঘণ্টা সময় লাগে। দু’টি ব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য সেখানে ওয়ানওয়ে (এক রাস্তায় চলাচল) করে দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ব্রিজ দু’টি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন এদিক থেকে ২০টা গাড়ি ছাড়ছে, ওদিক থেকে ২০টা ছাড়ছে। সেজন্য ব্রিজ দু’টির দু’পাড়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকে। ’
এই পরিবহন কর্মকর্তা বলেন, ‘বন্যা-বৃষ্টিতে সারাদেশেই রাস্তায় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে ওদিকে রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা পর্যন্ত পথটি যেতে আগে যেখানে ১৫-২০ মিনিট লাগতো, এখন লাগে ৩-৪ ঘণ্টা। ’
তিনি রাস্তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘মহাস্থান ব্রিজ ভাঙার কারণে ঠাকুরগাঁও বা পঞ্চগড় যাওয়ার ক্ষেত্রে নওগাঁ হয়ে মহাদেবপুর পার হয়ে জয়দেবপুর ঘুরে ফুলবাড়ি-আমবাড়ি হয়ে যেতে হচ্ছে, এতে জ্বালানি খরচ বাড়তি, গাড়িরও ক্ষতি, সময়ও নষ্ট। আবার দিনাজপুর রোডে আমবাড়ি পর্যন্ত কয়েকদিন আগেও এক কোমর পানি ছিলো। সেটা কিছুটা হলেও নামছে। তবে এখনও পানি আছে। কোনটা রাস্তা, কোনটা মাঠ, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন, আগে হেলপার যাচ্ছে, তারপর গাড়ি যাচ্ছে। ’
এই অবস্থায় নতুন করে আবার ভারী বর্ষণ হলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। মোশাররেফ বলেন, ‘বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গের কিছু কিছু রুটে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মানুষ এখন বাসের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এজন্য বাসে এবার চাপ বেশি। আমরা রাস্তাঘাটের কথা ভেবে ট্রিপ কমিয়ে দিয়েছি, এখন যাত্রীদের এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করাই মুশকিল হয়ে উঠছে। তারই আভাস মিলেছে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে। বিক্রির প্রথম দিনেই নেই হয়ে গেছে ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বরের টিকিট। বিকেল নাগাদ ২৮ ও ২৯ আগস্টের টিকিটও শেষ হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। ’
এখন যতটুকু টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেই টিকিটধারী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোই লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন মোশাররেফ। তিনি আশাবাদের কথা জানিয়ে বলেন, ‘যদি রাস্তায় কোনো ধরনের যানজট না হয় এবং খানা-খন্দ ঠিকঠাক হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ট্রিপ বাড়ানো যাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/