ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টাকার অভাবে এখনও বই কেনা হয়নি তার!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
টাকার অভাবে এখনও বই কেনা হয়নি তার! আশরাফুল মণ্ডল ও তার মা নাজমা বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ থেকে: শিক্ষাবর্ষের আট মাস শেষ হতে চলেছে, টাকার অভাবে এখনও বই কিনতে পারেনি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল মণ্ডল। বিধবা মা নাজমা বেগমের রোজগারে যেখানে তিনবেলা খাবারই জোটে না, অনাহারে-অর্ধাহারেও কাটে অনেক রাত, সেখানে বই কিনবেই বা কিভাবে?

বছর শেষ হতে চললেও বই কিনে দিতে পারেননি। নতুন বছরের সেশন ফিসহ অন্য অনেক খরচও যোগাতে হবে।

সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারবেন, না বন্ধ হয়ে যাবে- দুশ্চিন্তায় আছেন নাজমা বেগমও।

সিরাজগঞ্জ শহরের কালিয়াকান্দাপাড়ার আশরাফুলের জন্মের আগেই পানিতে ডুবে মারা যান তার বাবা। শহরের কিশমত বিড়ির কারখানায় কাজ করে সংসার চালান ভূমিহীন বিধবা মা নাজমা বেগম। সন্তানের পাশাপাশি বৃদ্ধা মা হালিমা বেগমের ভারও তার ওপরেই।

এক সময় আয় ভালো ছিলো নাজমা বেগমের। সে টাকায় টিনের বেড়া দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই করেছেন। দুই ছেলে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই আর বিধবা মায়ের খোঁজ নেন না।

বয়স বেড়েছে, আগের মতো আর কাজও করতে পারেন না। তার ওপরে বিড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় কারখানার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে কিশমত বিড়ি কর্তৃপক্ষ। এখন সপ্তাহে দুই/তিনদিন কাজ হলেও অন্য দিনগুলোতে বসে থাকতে হয়। ফলে ছেলে ও মাকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে নাজমা বেগমের।

অন্যরা যখন সকালে বই খাতা নিয়ে পড়ার টেবিলে, কালিয়াকান্দাপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল তখন মগ্ন থাকে বিড়ির ঠোঙা তৈরির কাজে। স্কুলের বেতনের ৫০ টাকা, প্রাইভেটের ৩০০ টাকা ও খাতা-কলম কেনার টাকা যোগাতে সকালে বাসায় বসেই এ কাজ করে। হাজার দু’য়েক ঠোঙা মোড়াতে পারে, এতে দিনে আসে ১৬ থেকে ২০ টাকা।

সে টাকা আর মায়ের রোজগারে খাতা-কলম জুটলেও গ্রামার ও অন্যান্য সহায়ক বই এখনও কেনা হয়ে ওঠেনি। এজন্য তার প্রয়োজন প্রায় চার হাজার টাকা। কবে সে টাকা জুটবে আর বই কিনতে পারবে- আদৌ জানে না আশরাফুল মণ্ডল।

আশরাফুল জানায়, বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার করে হাতে লিখে এনে চলে তার পড়ালেখা। বন্ধুরাও সহায়তা করে, তবে বাড়িতে গেলে অনেকের মা-বাবা বিরক্ত হন।

নাজমা বেগম বলেন, ‘কারখানা যেকোনো সময় বন্ধের কথাবার্তা কানে আসছে। অর্থমন্ত্রী নাকি বলেছেন, বিড়ি বন্ধ করে দেবেন। মালিকও বলেছেন, মনে হয় আর কারখানা চালাতে পারবো না। এ কারণে বড়ই চিন্তায় আছি’।

ত্রিশ বছর ধরে এই একটাই কাজ করে আসছেন। আর কোনো কাজও শেখেননি। শেষ বয়সে এসে নতুন কাজ শিখে অন্য কিছু করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করেন নাজমা বেগম। আর তেমন কাজও নেই সিরাজগঞ্জে। ঘরের জায়গাটুকু ছাড়া আর কোনো সম্পদও নেই তার, যা দিয়ে চলতে পারবেন। বিড়ি বন্ধ করে দিলে তাই ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে ছেলেকে সৎ পুলিশ বানানোর স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।

বিকল্প কাজ না দেওয়া পর্যন্ত বিড়ি বন্ধ না করতে সরকারের কাছে তাই দাবি জানান নাজমা বেগম। কেউ তার সন্তানের বই কিনতে সহায়তা করলে বুক ভরে দোয়াও করতে চান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।