ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেলকুচি শহরের ‘নাকের ডগায়’ পানি!  

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
বেলকুচি শহরের ‘নাকের ডগায়’ পানি!   বেলকুচি শহরের ‘নাকের ডগায়’ পানি!  

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) থেকে: মুকুন্দগাঁতী ‘বিসমিল্লাহ টাওয়ারের চার নম্বর সিঁড়িতে মাঝারি সাইজের একটি ডিঙ্গি নৌকা! তার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে ১৩/১৪ বছর বয়সী একটি ছেলে। 

টাওয়ারের সামনে ভেসে থাকা আরেকটি ডিঙ্গি নৌকায় খালি গায়ে বসে আছেন মাঝ বয়সী এক লোক। বৈঠায় ভর দিয়ে নৌকার গলুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দৃষ্টি যেন অদৃশ্য নিয়তির দিকে।

 
 
লাল বালতি হাতে দুই নৌকার মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলা লোকটির গন্তব্য  বিসমিল্লাহ টাওয়ার। এর নিচ তলায় সোহেল খেলাঘর অ্যান্ড স্টোর ও আশিক ফ্যাশনের সামনে হাঁটু পযর্ন্ত লুঙ্গি ‍তুলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের দেখে মনে হতে পারে-এটি বুঝি ঢাকা বা চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতার ছবি। কিন্তু মোটেই তা নয়!
 
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র এটি। বছরের ১০ মাস এখানে ব্যাটারিচালিত ভ্যান-রিকশার ঠেলা-ঠেলি। বাকি দেড়/দুই মাস এখানে নৌকা চলে। দূরের গ্রামগুলোতে যাত্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যবহার হয় ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা।
 
বেলকুচি উপজেলায় ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ’র এই ওয়াপদা বাঁধের পূর্ব পাশের গ্রামগুলো প্রতি বছর জুলাই আগস্টে প্লাবিত হয়। বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি প্রথমে কূল উপচে চর, পরে চর ভাসিয়ে গ্রামে ঢোকে।  
 
কিন্তু এবার সেই পানি গ্রাম ভাসিয়ে ওয়াপদা বাঁধ সংলগ্ন বেলকুচি শহরের নাকের ডকায় এসেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ১৯৮৮ সালের পর বেলকুচি শহরের এতো কাছে কখনো পানি আসেনি। এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে।  
বেলকুচির অভিজাত বিপণীবিতান ‘বিসমিল্লাহ টাওয়া’র সিঁড়ি ডোবান পানিতে ভেসে ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আক্কাস আলী। কার্লভাটের স্রোত ডিঙ্গিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছাতে হবে। তাই সঙ্গে যেতে চাইলেও নিতে রাজি হলেন না তিনি।  
বেলকুচি শহরের ‘নাকের ডগায়’ পানি!  
বললেন, আমি সাঁতার জানি। তাই এই স্রোতের মধ্যে নৌকা নিয়ে যাচ্ছি। আপনি যেতে পারবেন না। ওদিক দিয়ে অন্য নৌকায় যান। একটু সময় লাগলেও নিরাপদে যেতে পারবেন।  
 
আবুল কাশেম নামের পঞ্চশোর্ধ্ব ওই লোকটি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই এক থেকে দেড় মাসের জন্য বন্যার পানিতে ডুবে থাকে ঘর বাড়ি। সে জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতি থাকে। ঘরের মধ্যে উঁচু মাচা তৈরি করে নেই। রান্না বান্না সেখানেই হয়। চলাচলের জন্য নৌকা ব্যবহার করি।  
 
কিন্তু এ বছর পানি এতো বেড়েছে যে, শেষ পযর্ন্ত মাচার ওপর চৌকি পাততে হয়েছে। রান্না-বান্নার ভীষণ কষ্ট। নদীর পানি আরো বাড়লে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে হবে।  
 
মুকুন্দগাঁতী ওয়াপদা বাঁধের পূর্বপাশে তলিয়ে যাওয়া হোটেল থেকে চেয়ার টেবিল সরাচ্ছিলেন হোটেল কর্মচারী বেলাল হোসেন। বাঁধের পাশে আরেকটি উঁচু জায়গায় অস্থায়ীভাবে হোটেল চালানোর চেষ্টা তার মালিকের। মালপত্র সরানোর সময় বেলাল হোসেনের চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেলো।   
 
২ ছেলে ১ মেয়ের জনক চর দেলুয়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন- ‘চহির উপর চহি দিয়ে ছাওয়ালপাল ঘরে রাহি চলি আইছি। বউ অন্য বাড়ি গিছে রান্না করতি। ঘরের মধ্যে মাজা পানি। চিন্তায় কাজ করতি মন চাইছে না। ’
বেলকুচি শহরের ‘নাকের ডগায়’ পানি!  
স্থানীয়রা জানান, বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাঁতী, চালা, বোল্ডার বাজার, সাতমাথা, রানীপুরা, শাহপুর আগোরিয়া, রাজাপুর রতনকান্তী বেলকুচি, চর মূলাকান্দী, বেলির চর, সোহাগপুর, চর ষোলশ, জাংগোলা ও ভাঙার চরের শতভাগ ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে।  
 
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ভারি বর্ষণ না হওয়ায় বেলকুচি পয়েন্টে যমুনার পানি খুব একটা বাড়েনি। কিন্তু ভারী বর্ষণ বা উজানের ঢল বৃদ্ধি পেলে বেলকুচির ওয়াপদা বাঁধের পূর্ব পাশের গ্রামগুলোর অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  
 
এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।  
 
বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় শোক দিবসে আমরা বন্যাদুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছি। দলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে আলাদা আলাদা টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা নিয়মিত বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। খোঁজ নিচ্ছেন বন্যা পীড়িত মানুষের।  
 
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এজেড/বিএস    
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।