ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হিরো আলমের ‘ছক্কায় পাঁচ রান’!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
হিরো আলমের ‘ছক্কায় পাঁচ রান’! শফিকুর রহমান; ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ থেকে: হিরো আলমের ‘ছক্কা’ মাত্র পাঁচ রান করেছে। হল মালিক শফিকুর রহমানের কাছে এসে সান্ধ্যাকালীন শো’র বর্ণনা এভাবেই উপস্থাপন করলেন টিকেট মাস্টার।

শফিকুর রহমান সিরাজগঞ্জ শহরে অবস্থিত ‘মৌসুমী’ সিনেমা হলের মালিক। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সান্ধ্যাকালীন শো’তে (৬-৯) মাত্র ৫টি টিকেট বিক্রির কথা শুনে কয়েক সেকেন্ড গম্ভীর হয়ে থাকলেন।

তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আশির দশকে যখন আমার বাবা এই সিনেমা হল তৈরি করেন তখন একে নিয়ে অনেক গর্ব করতাম। নবম শ্রেণির ছাত্র আমি। বন্ধুরা আসত টিকেটের তদবির নিয়ে। বন্ধুমহলে ছিল আমার অন্যরকম মর্যাদা। সেই সিনেমা হল এখন আমাদের পরিবারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমী সিনেমা হল, ছবি: বাংলানিউজ

অনেক দিন ধরেই লোকসান দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাচ্ছি। না পারছি চালাতে, না পারছি ভেঙে অন্য কিছু করতে। আয় যা তাতে কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ ভ্যাট-ট্যাক্স উঠছে না।

এর জন্য দায়ী করলেন, ডিশ এবং ভারতীয় চ্যানেলের আধিক্যকে। বছরে দুই ঈদ ছাড়া কোনো সময়ে ব্যবসা হয় না। চলতি সপ্তাহে সদ্য মুক্তি পাওয়া হিরো আলম অভিনীত ‘মার ছক্কা’ চালিয়েছেন। টিকেট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে মাত্র ২২ হাজার টাকা। কমিশনের ভিত্তিতে সিনেমাটি এনেছেন। পঞ্চাশ শতাংশ পাবেন প্রয়োজক, আর হল মালিকের পঞ্চাশ শতাংশ অর্থাৎ ১১ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তার খরচ হয়েছে পনের হাজার টাকা। এখন ৪ হাজার টাকা ভর্তুর্কি দিতে হবে।

হলের যেমন দুরাবস্থা তেমনি প্রযোজকদের অবস্থাও নাজুক। পোস্টার ব্যানার বারবার তৈরির খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই খরচ বাঁচাতে সিরাজগঞ্জে যে পোস্টার-ব্যানার পাঠানো হযেছিলো। ছবি শেষ হলে সেগুলো থুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ছিলো মার ছক্কা’র শেষ দিন। এদিনও সন্ধ্যায় ব্যানার খুলে গোটাতে দেখে গেছে দু’জন স্টাফকে। যার একজন ছিলেন প্রযোজকের লোক।

সিনেমা হলের সুদিন আর নেই; ছবি: বাংলানিউজস্মৃতি হাতড়ে বললেন, নব্বইয়ের দশকে দেখেছি কী জমজমাট অবস্থা! মানুষ ট্রেনে করে ছবি দেখতে আসতো। এখানে এসে ট্রেন থামলে, ট্রেন খালি হয়ে যেতো, আর সিনেমা হল ভর্তি হয়ে যেতো। কতো লোক যে টিকেট না পেয়ে ফিরে যেতো! অনেকে পরের শো’তে ছবি দেখার জন্য অপেক্ষা করতো। আমাদের বাসার টেলিফোনে টিকেটের জন্য ফোন দিয়ে অনেকে তদবির করতো। শেষ মুহুর্তের জন্য কিছু টিকেট ধরে রাখতে হতো। নীচতলা উপরতলা(ডিসি)মিলে প্রায় ৬’শ সিট রয়েছে। কিন্তু আজকে নতুন ছবি চালানোর পরও মাত্র ৫ জন দর্শক হয়েছে। টাকার সংকট রয়েছে, তাছাড়া অনেক আগেই এটা ভেঙে ফেলতাম। এখানে মার্কেট করার চিন্তা রয়েছে।

তিনি বলেন, সিনেমা হলের খুবই দুর্দিন চলছে। সিরাজগঞ্জ শহরে এক সময চারটি হল ছিল। সবগুলোই জমজমাট ছিলো। লক্ষ্মী ও গোধূলী সিনেমা হল অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ৬ মাস বন্ধ রাখার পর গত ঈদের আগে চালু করেছি। আর কোনো রকমে টিকে আছে মমতাজ সিনেমা হল।

শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, সারাদেশেই সিনেমা হলের অবস্থা করুণ। একমাত্র শাকিব খানের ছবি হলে কিছুটা দর্শক হয়। অন্যদের প্রতি দর্শকের তেমন আগ্রহ নেই। আর ঈদের সময় কিছু দর্শক হয়। নাটোর জেলা শহরে এক সময় ৪টি সিনেমা হল ছিল। , সবক’টাই বন্ধ হয়ে গেছে। হলে সিনেমার দৃশ্য; ছবি: বাংলানিউজ

উল্লাপাড়ায় সিনেমা হল ছিল ৫টি, তার মধ্যে এখন মাত্র ১টি হল চালু রয়েছে। শাহাজাদপুরে ৬টির মধ্যে মাত্র ৩টি চালু, বেলকুচিতে ৬টির মধ্যে ২টি, রাজশাহীতে ৫টির মধ্যে মাত্র একটি, বগুড়ায় এক সময় ৭টি হলের মধ্যে ১টি হল খুঁড়িয়ে চলছে।

শফিকুর রহমান দাবি করেন, ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসা, জলসা মুভি, জিবাংলা, স্টারপ্লাস বন্ধ করতে পারলে মানুষ হলমুখী হবে। আর হলমুখী হলে দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা পাবে। না হলে আমাদের সমাজটা নষ্ট হযে যাবে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।