ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লিফট-সিসিইউ সুবিধার আরও আধুনিক লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
লিফট-সিসিইউ সুবিধার আরও আধুনিক লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে সুন্দরবন-১১ এর ভেতরকার নকশা। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে লিফট ও করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বেডের সুবিধাসহ আরও আধুনিক একটি লঞ্চ সংযোজন করতে যাচ্ছে সুন্দরবন নেভিগেশন কর্তৃপক্ষ। এই রুটের সুন্দরবন-৭ লঞ্চকে আধুনিকায়ন ও বর্ধিত করে নামানো হচ্ছে নৌযানটি, নাম দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবন-১১। 

লঞ্চটি আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রী সেবায় নামানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নদীপথ ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত যাত্রীসেবায় নিয়োজিত হবে এটি।

বিষয়টি বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সুন্দরবন শিপইয়ার্ডের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বাবুল। তিনি সুন্দরবন-১১ এর গঠন ও নানা দিক নিয়ে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, সুন্দরবন-৭ লঞ্চটির মূল বডির ওপরের দু’টি ডেক ফেলে দিয়ে নতুন করে করা হয়েছে, পাশাপাশি লঞ্চের সামনের অংশের নকশাও পরিবর্তন করে সুন্দরবন-১০ এর আদলে করা হয়েছে।

সুন্দরবন-১১ এর ভেতরকার চিত্র।  ছবি: বাংলানিউজ
তিনি জানান, দেশের আভ্যন্তরীণ রুটে প্রথমবারের মতো লিফট ‍ও সিসিইউ বেডের সুবিধা নিয়ে সুন্দরবন-১০ লঞ্চ যাত্রীসেবায় নামে। এবার এ রুটে আরও আধুনিক লঞ্চ হিসেবে যুক্ত হচ্চে সুন্দরবন-১১।

তিনি জানান, ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের নামকরণের ফলে পটুয়াখালী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন-১১ নামের লঞ্চটিকে সুন্দরবন-৭ এর নাম দেওয়া হচ্ছে।

ডক-ইয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুট ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সর্বোচ্চ আধুনিক ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ লঞ্চটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলছে সাজ-সজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ। লঞ্চটিকে নদীপথে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোও হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সুন্দরবন-১০ এর মতো সুন্দরবন-১১ লঞ্চেও থাকছে একটি ডুপ্লেক্স কেবিন ও ফুডকোর্টসহ নানান প্রযুক্তির ছোঁয়া। তবে এ লঞ্চে কেবিনের যাত্রীদের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পৃথক দু’টি ডাইনিং রুম বা রিসিপশন রুম রাখা হয়েছে। যা আগের লঞ্চটিতে ছিল না।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চটি দৈর্ঘ্যে ৯০ মিটার ও প্রস্থে ১৫ মিটার রয়েছে। লঞ্চের ডেকের নিচের অংশটা কম্পার্টমেন্ট আকারে করা হয়েছে। যেন লঞ্চের তলার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপর অংশে পানি প্রবেশ করতে না পারে। সুন্দরবন-১১ এর ভেতরকার নকশা।  ছবি: বাংলানিউজলঞ্চটির নিচতলার ও দ্বিতীয় তলার ডেকের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট ও আলাদা ক্যান্টিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে প্রথম শ্রেণীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একক ও ডাবল মিলিয়ে ১শ’র মতো কেবিন ও ৪৪টি সোফা। এছাড়া রয়েছে ১টি ডুপ্লেক্স কেবিন, ৬টি ভিআইপি, ৪টি সেমি-ভিআপি, ২টি সৌখিন ও বেশ কিছু ফ্যামিলি কেবিন। যার সবগুলোই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। আর পুরো লঞ্চে যাত্রীসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ৩৯টি টয়লেট রয়েছে।  

এরমধ্যে প্রতিটি ভিআইপি কেবিনের মধ্যে আলাদা বারান্দা ও বাথরুম রয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক আরামদায়ক বিছানা, ফ্রিজ ও লকারসহ নানান সুবিধা। সুন্দরবন-১০ এর মতো ভিআইপি এসব কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে ‘৭১’, ‘অমর একুশে’সহ সংস্কৃতি ও ঐহিত্যবাহী নামে। এছাড়া লঞ্চের ডেক থেকে কেবিন, সোফা, ভিআইপি কেবিন সবখানেই যাত্রীদের বিনোদনের জন্য থাকছে এলইডি টেলিভিশন। লঞ্চটির কেবিনগুলোর জানালা-দরজার গ্লাসে করা হয়েছে নানান নকশা ও আলোকসজ্জা। এই লঞ্চে এলইডি ও সাধারণ মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাতির সংযোজনে আলোকসজ্জায় আনা হয়েছে পরিবর্তন।  

লঞ্চটিতে নিচতলার সামনের অংশে হৃদরোগীদের জন্য থাকছে এক শয্যাবিশিষ্ট স্বয়ংক্রিয় সিসিইউ মনিটর বেড সম্বলিত সিসিইউ ইউনিট। এখানে অক্সিজেনের পাশাপাশি চিকিৎসা সুবিধাও পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে উপরে-নিচে চলাচলের জন্য রয়েছে লিফট। পাশাপাশি বিশেষভাবে নির্মিত সিঁড়ি বেয়ে নিচতলা থেকে সরাসরি দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় চলে যাওয়া যাবে। সুন্দরবন-১১ এর শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা চলছে।  ছবি: বাংলানিউজদ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার যাত্রীদের চা-কফি পানের সুবিধার পাশাপাশি লঞ্চের বারান্দায় ও সামনে রয়েছে গোছালো বসার জায়গা। রয়েছে নামাজের জন্যও আলাদা জায়গা। নিরাপত্তার জন্য পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত হবে। তৃতীয় তলার ফুডকোর্টে থাকবে যাত্রীদের জন্য বাহারি ধরনের নাস্তাসহ খাবার।

চতুর্থ তলাটি হুইল হাউজ (চালকের কক্ষ) হিসেবেই ব্যবহৃত হবে। লঞ্চটিতে দু’টি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে থাকছে হাইড্রোলিক ও ম্যানুয়াল চালনা পদ্ধতি, আধুনিক রাডার ও জিপিআরএস পদ্ধতি। রয়েছে ফগ লাইট, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি, লাইফ জ্যাকেট ও বয়া।

হাজারের ওপর যাত্রীধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লঞ্চটির প্রতি স্তরের ভাড়া এ রুটে চলাচলকারী অন্য লঞ্চের মতোই থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌযানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad