সেই পানি মারিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে পাশাপাশি দু’টি টিনের ঝুপড়ি ঘরের গলি হয়ে বেরিয়ে এলেন ফুলেরা নামে এক বৃদ্ধা। সঙ্গে হাত উঁচিয়ে ইশারায় দেখালেন তার থাকার ঝুপড়ি ঘর হাটু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কথা।
একটু ফাঁকেই বাঁধের পূর্বপাশে বসে ছিলেন দুলাল ও নুরুল ইসলাম। তাদের বয়সও ষাটের কাছাকাছি। যাদের বসতভিটা বন্যায় তলিয়ে গেছে। আশ্রয় নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
আর সেই বাঁধে ফাটলের খবর শোনার পর থেকে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া হাজারও বানভাসি মানুষের গেলো রাতের আতঙ্কের কথা তুলে ধরেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে ওই এলাকায় সরেজমিনে গেলে বানভাসি মানুষেররা বাঁধ ভাঙার খবরে আতঙ্কের কথা জানান।
তারা জানান, বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরের পর থেকেই খবর আসতে থাকে সারিয়াকান্দির গোদাখালীতে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের অন্যত্র সরিয়ে যেতে মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সত্য-মিথ্যা কিংবা গুজব যাই হোক না কেন– এমন খবর শোনার পর থেকেই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সবার মতো নুরুল, দুলাল, ফুলেরারাও ভীষণ উদ্বিগ্ন। আর ভাবতে থাকেন-‘আর রক্ষা নাই’।
সন্ধ্যার পর খবর এলো ধুনটের শিমুলবাড়িতে বাঁধের অবস্থা নেড়েবড়ে। যে কোনো সময় সেখানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এসব খবর শোনার পর বানভাসি মানুষজন যে যার মতো করে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এসব খবর ছড়িয়ে পড়লে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছুটোছুটি শুরু করেন বাঁধ রক্ষায়। ঘটনাস্থলে ছুটে যান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও।
এরপর বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি লোকজনও বস্তায় বালু ভরে বাঁধ রক্ষায় কাজে নেমে পড়েন। অনেকে পাউবো’র শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে মিলেমিশে বাঁশ কাটাকাটিসহ অন্যান্য কাজকর্মও শুরু করেন।
বাঁধের অবস্থা বেগতিক–এমন খবর শোনে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাঁধের শিমুলবাড়ি এলাকার পরিদর্শনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাবিবর রহমান।
দুলু সেখ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বড় বড় অফিসার চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পুরো রাতজুড়ে উপস্থিত থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ করেন।
একই কথা জানালেন বানভাসিদের মধ্যে রেখা বেগম, রাহেলা বেগম, আনোয়ারা বেগম, হেনা খাতুন, মজিবর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি।
তাদের ভাষ্য, শিশু ছাড়া সারা রাত বাঁধে আশ্রয় নেওয়া কেউ ঘুমাননি। সবাই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। অনেকেই শ্রমিকদের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁধ রক্ষার কাজ চালিয়ে যান। শেষমেষ বাঁধের ভাঙন ঠেকানো যায়। তবে এরই মধ্যে ভোরের আলো ফুটে উঠে।
পরে সকালে বাঁধ রক্ষার কাজে তদারকিতে নিয়োজিত কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বাঁধে ফাটল ধরা জায়গাগুলো বিপদমুক্ত। কিন্তু যমুনার পানি বিপদসীমার নিচে না নামা পর্যন্ত শতভাগ বিপদমুক্ত বলা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এমবিএইচ/এমএ