চারদিনের টানা বর্ষণে চিকলী ও খড়খড়িয়া নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। এরপর উপজেলা শহরের পশ্চিম পাটোয়ারিপাড়া ও বসুনিয়াপাড়া এলাকায় খড়খড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পাটোয়ারিপাড়া, বসুনিয়াপাড়া, কুন্দল, নয়াবাজার ও বাঁশবাড়ি এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়ে।
শহরের দিনাজপুর সড়ক থেকে ২ ফুট নিচু হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল চত্ত্বরও। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংকীর্ণ হওয়ায় সে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। তাই রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত দুই কিশোরসহ মারা গেছেন তিনজন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানিপ্রবাহ কিছুটা কমলেও এখনো গ্রাম-গঞ্জ ও পৌর অনেক এলাকার বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে হাঁটু পানি। পানি নামার পর পাটোয়ারিপাড়া-কাজিহাট-দিনাজপুর রোডের বিভিন্ন স্থান ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা দেখা যাচ্ছে। খুব সাবধানে চলাচল করছে দূরপাল্লারসহ ছোট-বড় যানবাহন।
এ সড়কের কুন্দল দহলা ব্রিজটি যেকোনো মুহূর্তে ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ব্রিজের উভয় পাশের মাটি সরে ও রেলিং ভেঙে গেছে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বজলুর রশীদ জানান, সৈয়দপুর পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন চলমান বন্যায় সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহররক্ষা বাঁধের দুই জায়গা ও কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের তিন জায়গায় ভাঙনে পুরো উপজেলায় সাময়িকভাবে প্রচুর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সকল জায়গা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শুক্রবারের (১৮ আগস্ট) মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। তিনি বলেন, ‘পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় আকস্মিক বন্যায় বেশ ক্ষতি হয়েছে সৈয়দপুরবাসীর। বিশেষ করে সাঁতার না জানা সত্ত্বেও পানিতে নেমে দু’জন কিশোরের মৃত্যু আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ২৫ কিমি বাঁধ এবং ৭ কিমি গ্রামীণ পাকা রাস্তা (বিশেষ করে কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি গ্রাম মূল সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে আছে। গবাদিপশু ও পোলট্রিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ১৬টি ও পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নভাবে ৭টিসহ মোট ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে (পৌরসভায় ০১টি, কামারপুকুরে ০৮টি ও কাশিরাম বেলপুকুরে ১৪টি) কম-বেশি ২ হাজার ৫০০ মানুষকে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল স্তরের মানুষের আন্তরিক সহায়তায় আশ্রিত সকল মানুষের খাবার নিশ্চিত করা হয়েছে’।
‘সরকারের বরাদ্দকৃত ১৫ মেট্রিক টন চাল ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি চিকিৎসক, কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠে থেকে বন্যার্তদেরকে পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমস্যা থাকলেও আমাদের প্রচেষ্টায় শহরের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্র আমাদেরকে আর একটু সময় দিতে হবে’।
ইউএনও আরও বলেন, ‘তালিকা অনুসারে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ বাদ পড়েন, অবশ্যই তাদেরকেও দেওয়া হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এএসআর