ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যা নিয়ন্ত্রণে অর্ধেক ব্যয়ই কর্মকর্তাদের গাড়িতে!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
বন্যা নিয়ন্ত্রণে অর্ধেক ব্যয়ই কর্মকর্তাদের গাড়িতে! সরকারি গাড়ি

ঢাকা: জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ সহায়তায় বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে শুরু হচ্ছে প্রকল্প। এ প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত ও দামি গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এর বদলে পর্যাপ্ত জলযান কেনার পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সম্প্রতি ‘দ্য ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট’ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ।

বন্যাসহ দুর্যোগে প্রতি বছর ৫৭০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণে অর্থনীতির ক্ষতি হয়ে থাকে। যা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম অন্তরায়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের বন্যাসহ জরুরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পল্লী সড়ক, কালভার্ট, সেচ অবকাঠামো ও ড্রেনেজ কাঠামো পুনরুদ্ধারসহ অন্যান্য মেরামত কাজে এ অর্থ ব্যয় হবে।

তবে কর্মকর্তাদের জন্য মোটরগাড়ি ও জলযান কিনতেই বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক ১০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। এর মধ্যে ১৪টি জিপ ও দু’টি ডাবল কেবিন পিক-আপসহ ১৬টি মোটরগাড়ি কিনতে ৪০ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং ১২টি রেসকিউ স্পিডবোটসহ ৫৪টি জলযান কিনতে ৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে ।

ছবি-বাংলানিউজবাকি ১৩৫ কোটি টাকার মধ্যে আরও ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে কর্মকর্তাদের বেতন, বাড়িভাড়া, বিনোদন ভাতা, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও শিক্ষা ভাতা খাতে।

ফলে প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি ১২৫ কোটি টাকাই ব্যয় হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য। আর বন্যাদুর্গত এলাকার জনগণের জন্য বরাদ্দ থাকছে মাত্র ১০৭ কোটি টাকা।
 
পিইসি’র এক সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব)  এ এন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এতো গাড়ি কি কাজে ব্যবহার করা হবে এবং কোথায় রাখবেন?’
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের প্রতিনিধি বলেন, ‘উপকূলীয় ১২টি জেলার জন্য ১২টি জিপ বিতরণ করা হবে।    প্রকল্প অফিসের জন্য বরাদ্দ থাকবে বাকি চারটি’।
 
তবে এন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় এতো গাড়ি কেনা ঠিক হবে না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের জন্য একটি জিপ ও দু’টি ডাবল কেবিন পিক-আপ কেনাই ভালো হবে। এ প্রেক্ষিতে ১৪টি জিপ গাড়ির মধ্যে ১৩টি বাদ দেওয়া সমীচীন হবে। তবে ১২টি স্পিডবোট কেনার সংস্থান ঠিক আছে’।
 
এ এন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অন্য কর্মকর্তাদের গাড়ি দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা কেন তাদের গাড়ি কেনার অনুমতি দেবো? আমরা শুধু পিডি (প্রকল্প পরিচালক) ও ডিপিডিকে (উপ-প্রকল্প পরিচালক) গাড়ি দেবো। সেজন্যই দু’টি গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছি। ১৬টির মধ্যে বাকি ১৪টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাদ করে দিয়েছি’।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ফয়জুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত গাড়ি কেনার হিসাব আমাদের কাছে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কোথায় কোথায় গাড়ি লাগবে- সে হিসাব আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad