ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘অনেক কথাই শুনি, উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
‘অনেক কথাই শুনি, উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি’ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী/ ছবি: পিআইডি

ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বের বিষয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, “অনেক কথাই আমরা এখন শুনি। সব কথার উত্তর দেওয়ার হয়তো এখনও সময় হয়নি।”

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৬ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতা ঘোষণা করার দায়ে আমার বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো আর ইয়াহিয়া খান ওই ২৬ মার্চে তার বক্তৃতায় একজনকেই তো দোষারোপ করেছেন।

কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করে যে, একজনের দ্বারা দেশ স্বাধীন হয়নি, একজনের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। ”

“জাতির পিতা শুধু নেতৃত্ব দেননি এই আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এই সংগঠন গড়ে তুলতে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। যারা এ কথা বলেন যে, কোন একক ব্যক্তির দ্বারা দেশ স্বাধীন হয়নি তারা কি ইয়াহিয়া খানের ভাষণটা পড়েন নাই। ”

“হ্যা, এটা ঠিক এককভাবে কেউ করতে পারে না। সেটা করার জন্য সংগঠন করতে হয়েছে, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়েছে। জনগণ তার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিটি নির্দেশনা অনুসরণ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন। ”

“...মামলা করে, বিচার করে বিচারের রায়ে ফাঁসি দিয়ে গিয়েছিলো ইয়াহিয়া খান। আর কাউকে তো দেয়নি। একক নেতৃত্বের কারণেই তো ফাঁসির হুকুম দিয়ে গিয়েছিলো ইয়াহিয়া। ”

“মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এদেশকে মর‌্যাদাপূর্ণ করে গড়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভাগ্য আমার কেবল এটাই মনে হয় যে, এদেশের মানুষের কল্যাণে যেই কাজ করুক তাকেই যেন জীবনে চরম খেসারত দিতে হয়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ভয়াবহ অবস্থা থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে একটা উন্নত দেশের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাতির পিতা। ঠিক সেই সময় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট চরম আঘাতটা আসে। যার ফলে বাংলাদেশ আবার যেন পিছিয়ে গেলো। ”
 
“লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি জাতির পিতার নামটা পর‌্যন্ত উচ্চারণ করা যাবে না।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ৯৬ এর বাংলাদেশ মনে হতো যেন মুক্তিযুদ্ধ করাটাই একটা অপরাধ। স্বাধীনতা আনাটাই যেন একটা অপরাধ। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা। ”
 
“অতি সুক্ষ্ণভাবে জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া। যারা ২৭ মার্চ পর‌্যন্ত পাকিস্তানের অধীনে চাকরি করেছে তাদের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রচার করারসহ যত মিথ্যাচারে এদেশ ভরে গিয়েছিলো। অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে এ হত্যাকাণ্ড খুনিরা চালিয়েছিলো। এটা একটা বিরাট ষড়যন্ত্র ছিলো। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত খুনি মোস্তাক। আর খুনি মোস্তাকের দোসর ছিলো জিয়াউর রহমান। ”

“খুনি মোস্তাক অবৈধভাবে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেয়। আর জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। তারা কতটা ঘনিষ্ট ছিলো যে সঙ্গে সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে।

যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা খুন ধর্ষণে পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতা করেছিলো, পাক হানাদারদের পথ ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, মা বোনদের তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলো ৭৫-এ তারাই ক্ষমতায় এসেছিলো। ”

“যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো। জাতির পিতার খুনিদের শুধু পুরস্কৃত করা নয়, বার বার পুরস্কারের খেলা আমি দেখেছি। কেউ খুনিদের নিয়ে সংগঠন করেছে। ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন খুনি হুদা এবং শাহরিয়ার এদের দিয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে একটি দল গঠন করে। ইত্তেফাকে বসে এই মঈনুল হোসেন খুনিদের রাজনৈতিক সংগঠন করেছিলো। জিয়াউর রহমান কাউকে প্রধানমন্ত্রী, কাউকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা করেছিলো। ”
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জেনারেল এরশাদ ওই খুনি ফারুক, রশীদকে দিয়ে ফ্রিডম পার্টি তৈরি করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী তৈরি করেছিলো। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার বিহীন নির্বাচন করে ওই খুনি রশীদ, হুদাকে সংসদ সদস্য করে বিরোধী দলের চেয়ারে বসিয়েছিলো। যারা আত্মস্বীকৃত খুনি তাদের ক্ষমতার সাথী বানিয়েছিলো এসব ক্ষমতা দখলকারীরা। ”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংবাদিক আবেদ খান, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও জাতীয় চার নেতার এক নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমিন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

** তারা কি ইয়াহিয়ার ভাষণ শোনেননি?

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।