ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই হাট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই হাট! বাঁধের ওপরই হাট বসিয়েছেন সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ীরা: ছবি: আরিফ জাহান

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে: পেটের দায় বড় দায়। নইলে কি আর বাঁধ ঝুঁকিতে পড়বে জেনেও তাতে হাট বসায় কেউ! কিন্তু যারা সর্বস্ব হারিয়েছে একরাতে যমুনার গ্রাসে, তাদের কীইবা করার আছে!

রাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম মাইজবাড়ী। ঢেকুরিয়া, বিলচতল, ভাঙারছেই, পোড়াবাড়ী, মাইজবাড়ী ও নতুন মাইজবাড়ী নিয়ে ৬নং এই ইউনিয়ন গঠিত।

ইউনিয়নটির অবস্থান বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ লাগোয়া। উত্তরের সোনাতলা উপজেলা থেকে সারিয়াকান্দি হয়ে ধুনট উপজেলার দক্ষিণের শেষ এই ইউনিয়ন পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ(বিআরই) বাঁধের অবস্থান। আর এ বাঁধের সর্বশেষ প্রান্তে একটি অতি প্রাচীণ হাট অবস্থিত। যার নাম ঢেকুরিয়া হাট। বর্তমানে এ হাটটি বন্যার পানির নিচে।

প্রায় ২১৭টি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪টি মসজিদ হাটের সীমানায় অবস্থিত। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে যমুনার পানি ঢুকে অতি প্রাচীণ এই হাটটি তলিয়ে যায়। হাটের ভেতর কোথায় কোমর আবার কোথাও বা বুক-পানি।

এদিকে হাটের এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে অনেকেই পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের একটি অংশজুড়ে হাট বসিয়েছেন। এতে বাঁধের ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। ঝুঁকি বেড়েছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোরও। কিন্তু আর কোনো উপায় না পেয়ে ছোট-মাঝারি সারির বানভাসি দোকানিরা এই হাট বসিয়েছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে এর কোনো বিকল্প ছিলো না বলে মন্তব্য তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের একটা বড় অংশজুড়ে দু’পাশ দিয়ে লম্বাভাবে দোকান ঘর তোলা হয়েছে। বাঁশের খুটি দিয়ে একযোগে বা পৃথকভাবে ঘরের ফ্রেম বানিয়ে টিন বা পলিথিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও এসব ঘর তৈরিতে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আর পণ্য রাখার জন্য কাঠের চৌকি ব্যবহার করছেন অনেকে। কেউ কেউ টেবিল আবার অনেকেই মাটিতে বস্তা অথবা পাটের চট বিছিয়ে রকমারি পসরা সাজিয়েছেন।

এসব দোকানে মানুষের খাবার থেকে শুরু করে মাছ, হাঁস, মুরগী ও গবাদি পশুর খাবার পাওয়া যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা তরি তরকারি ও মাছ-মাংস। মানুষের ওষুধপত্র ও বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী এসব দোকানে সীমিত আকারে হলেও পাওয়া যাচ্ছে।

তবে বেচাবিক্রি বেশ ভালো হওয়ার কারণে দিনদিন পণ্যের যোগান কমে যাচ্ছে। এসব দোকানিরা নতুন করে আর মাল তোলার সাহস পাচ্ছে না। কারণ এমনিতেই তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।

আব্দুল লতিফ, আব্দুর রাজ্জাক, রাজু মুন্সী, অখিল চন্দ্র, পরিতোষ বাংলানিউজকে জানান, বাবা-দাদার আমল থেকেই এ হাটের কথা শুনে আসছেন তারা। জন্মগতভাবে তারাও নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু এবারের বন্যা তাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। এক রাতেই সবকিছু কেড়ে নিয়েছে হিংস্র যমুনা।

এই ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত বছরগুলোতেও বন্যা হয়েছে। তবে এভাবে এক রাতে হাট তলিয়ে যায়নি। আচমকা হাটে পানি ঢুকে পড়ায় সিংহভাগ ব্যবসায়ী কিছু বের করতে পারেননি। এতে তাদের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। সে হিসেবে যার যা আছে তাই নিয়ে বাঁধের ওপরই  দোকান বসিয়েছেন।

মাইজবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ ইউনিয়নে বিলচতল গ্রামে ৪৪০টি পরিবার, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ঢেকুরিয়া গ্রামে ৪৪০টি পরিবার, ভাঙারছেই গ্রামে ৩১৫টি পরিবার, পোড়াবাড়ির ১০৫টি পরিবার, মাইজবাড়ী গ্রামের ৪৭৫টি পরিবার ও নতুন মাইজবাড়ী গ্রামে ৩৭৫টি পরিবার রয়েছে।

বন্যার কারণে ইতোমধ্যেই এসব পরিবার বাড়িছাড়া হয়েছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগ মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন বলেও যোগ করেন সাবেক এই জনপ্রতিনিধি। বাংলাদেশ সময়:২১৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭।
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।