বুধবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে 'বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ' শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ‘যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, সেই হায়েনারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। আসলেই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি’।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস না জানলে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে না। ইতিহাস জানা প্রত্যেকটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব’।
‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকবার ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছে। সুবিধাবাদী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস্রা বিভিন্ন সময়ে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে’।
মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ড. অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একাত্তরে যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, পরবর্তীতে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নামও নেওয়া যায়নি সে সময়। কিন্তু এখন যতোই দিন যাচ্ছে, শেখ মুজিব আমাদের মনে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছেন’।
‘বঙ্গবন্ধুকে বাঙালিরা হত্যা করেননি, তাই আমাদের মনে কোনো ভয় নেই। যারা তাকে হত্যা করেছিলেন, তারা শৈলী অবয়বে বাঙালি হলেও মনে-প্রাণে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা’।
১৯৭৫-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৭ পর্যন্ত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মিনি সংস্করন করার চেষ্টা চলেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করে বলেছিলেন, ‘আপনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে’। তখন শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ওরা আমার সন্তানের মতো, ওরা এমন করতে পারে না’। তিনি সবাইকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙ্গাল’। এই হলেন আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু’।
১৫ আগস্টে নিহত কর্নেল জামিলের মেয়ে চিত্রশিল্পী আফরোজা জামিল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর টেলিফোন পেয়ে আমার বাবা কর্নেল জামিল সে সময়ের সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে ফোন করে বলেন, ‘৩২ নম্বরে ফোর্স পাঠাও, আমি সেখানে যাচ্ছি’। তারপর গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান’।
‘বাবা যখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিলেন তখন মা বললেন, ‘তুমি কি যাবেই?' জবাবে বাবা বললেন, ‘তুমি কি বলছো, বঙ্গবন্ধু বিপদে, আর আমি যাবো না?' যাওয়ার পথে সোবহানবাগ মসজিদের সামনে তার গাড়ি থামানো হয়। এ সময় তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে খুনিদের একজন কর্নেল হুদা বাবাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেন’।
সভায় রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আইজিপি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মাহফুজুল হক মারজান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
পিএম/এএসআর