ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৮৮ কেও ফেল মারছে এবারের পানি

পিয়ারুল ইসলাম হুমায়ূন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
৮৮ কেও ফেল মারছে এবারের পানি ৮৮ কেও ফেল মারছে এবারের পানি

গাইবান্ধা: সকালেই বাড়ির আঙনে (আঙ্গিনা) খুলি (উঠান) শুকনা আছিল। দুপুরে হুট করে ঘর থেকে দেখম আঙনেত হাঁটু পানি। দৌড় দিয়ে বাপ-বেটা (ছেলে-বাবা) মিলে কোনমতে গরুগুলো বাঁধ পর্যন্ত আনছি। আর কিছু নিবের টাইম পাইনি, তাতেই সব শেষ। এবারে যে পানি হইছে, তাতে ৮৮ কেও ফেল মারছে।

হুট করি বাঁধটা ভাঙ্গি বাড়ি-ঘর ঢুবে গেল। আবাদি জমি আর পুকুরের মাছের তো খবরি নাই।

বাড়ি আর ঘরের জিনিসজানা (আসবাবপত্র) এক চিমটিও নিবের টাইম দিল না বাহে। এখন বাঁধে রাইত (রাত) জাগি বাপ-বেটা মিলে গরু পাহারা দিমো।

এভাবেই বাঁধ ভেঙে মুহূর্তে সবকিছু হারিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চেরেঙ্গা বাঁধ এলাকার বদিয়াজ্জামান (৭৬)।  

৮৮ কেও ফেল মারছে এবারের পানিতিনি বলেন, পানিত আবাদি জমি, পুকুরের মাছসহ ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে। শেষ সম্বল দশটা গরুসহ বাঁধে আশ্রয় নিছি। কিন্তু হেঁটেও (এখানেও) তো শান্তি নাই, গরু চুরির ভয়ে বাপ-বেটা রাইত (রাত) জাগি গরু পাহারা দিমো।   

পানির প্রবল চাপে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে হঠাৎ করে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় হোসেনপুর ইউনিয়নের চেরেঙ্গা বাঁধের ৪’শ ফিট ও কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের টোংরারদহ এলাকায় করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২’শ ফিট ভেঙে গেছে।

এতে করে বদিয়াজ্জামানের মতো আরও ১৬ গ্রামের মানুষ হারিয়েছে সবকিছু। তারা সবকিছু হারিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে মাথা গুজিয়েছে।  

৮৮ কেও ফেল মারছে এবারের পানিএকই এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যে হারে পানি ঢুকছে। তাতে করে পলাশবাড়ী উপজেলাসহ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ঢুবে যাবে। তবে বাঁধের দ্রুত না ঠেকানো গেলে বিপদ আরও বাড়বে। এছাড়া আমাদের নিজেদেরই খাবারের জোগান নেই। গরু-ছাগলকে কি খাওয়াবো।

এদিকে, গাইবান্ধার চার নদীর মধ্যে তিন নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে করে বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ। পানির চাপ বাড়ায় জেলার চারটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও একটি ক্রস বাঁধ ভেঙে গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাঘাটা উপজেলার অর্থ শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।  

এছাড়া জেলার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত। দুই উপজেলার হাজারো পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা, পরিত্যক্ত রেল লাইন ও আশ্রয় কেন্দ্রে। এদের অধিকাংশ মানুষেই খালি হাতে বাড়ি ছেড়েছেন। এছাড়া ফসলি জমি, পুকুরের মাছসহ নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে গাছপালা।  

বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে ব্রহ্মপুত্রে পানি বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক লেভেল ২০ দশমিক ৮৫) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ৮৩ (স্বাভাবিক লেভেল ২২ দশমিক ৫৩) ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ (স্বাভাবিক লেভেল ২০.৫৯) সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

এদিকে, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের দুইটি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে সাঘাটা-গাইবান্ধার মেইন সড়কটি। তবে সড়কটি যেকোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডুবে যাবে গাইবান্ধার পাঁচ উপজেলা।  

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যা দূর্গতদের ইতমধ্যে ৫’শ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া পর্যান্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। এছাড়া ধসে যাওয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনীর ৮৫ জন সদস্য মাঠে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ