ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিহ্যালে ছওয়ালপাল বাজার কইর‌্যা আইনলে রান্ধা-খাওয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
বিহ্যালে ছওয়ালপাল বাজার কইর‌্যা আইনলে রান্ধা-খাওয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: হক্কাল বেলা চাইরড্যা পান্তা খাইয়্যা দুই ছওয়াল চইল্যা গ্যাছে জাল বাইব্যার। যা কামাই অয় তাই দিয়্যা বিহ্যালে বাজার কইর‌্যা আইনবো। তারপর আমাগোরে রান্ধা-খাওয়া। তিনদিন ধইর‌্যা এইভাবেই দিন কাটাইত্যাছি।

বুধবার (১৬ আগস্ট) বাড়ির উঠানে বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে তাঁতশ্রমিক শহীদ আলীর স্ত্রী হেনা খাতুন আরও বলেন, এক মাস আগেও বাড়িতে বানের পানি উঠছিল। তহন (তখন) আমার স্বামী যে তাঁতের ফ্যাক্টরিতে কাম কইরতো, হেডা বন্ধ অইয়্যা যায়।

মাত্র হপ্তাখানেক ধইর‌্যা তাঁত ফ্যাক্টরি চালু অইয়্যা কাম-কাজ শুরু অয়। হটাত কইর‌্যা আবার বানের পানি ঢোকায় ফের কাম-কাজ বন্ধ অইয়্যা গেলো। এ্যহন আমার দুই ছওয়াল হালদারগোরে জাল টাইন্যা পঞ্চাশ/একশো ট্যাহা পায়। তাই দিয়্যাই কুনমতে সংসার চালাইত্যাছি।

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব বাঐতারা গ্রামের শহীদ আলী-হেনা খাতুন দম্পতির ১৩ বছরের ছেলে হেলাল ও ১০ বছরের ছেলে মুক্তার হোসেন ছাড়াও রয়েছে একটি কন্যা সন্তান। হতদরিদ্র এ পরিবার জুলাই মাসে প্রথম দফা বন্যাতেও পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। সে সময় বন্ধ হয়ে যায় সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম শহীদের কাজ। ওই সময় দুই সন্তান জেলেদের সঙ্গে জাল টেনে যা আয় করতো সেটা দিয়েই চলতো সংসার। দ্বিতীয় দফা বন্যায় চরম বিপাকে পড়েছে পরিবারটি।

একই ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর গ্রামের তাঁতশ্রমিক মামুন সরকারের ঘরের মেঝেতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বানের পানির সঙ্গে অসংখ্য কচুরি পানা এসে ঠেকেছে উঠোনের মাঝখানে। নানা ধরনের পোকামাকড়ের ঝুঁকির পাশাপাশি নোংড়া পানির মধ্যে বসবাস করছেন তারা। তারপরও আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা উঁচু কোনো স্থানে ঠাঁই নেয়ার চেষ্টা পর্যন্তও করছে না পরিবারটি। ছবি: বাংলানিউজশিশু সন্তান কোলে নিয়ে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামুনের স্ত্রী মনি খাতুন ও তার দুই জা। তারা বলেন, ঘরের জিনিসপত্র নিয়্যা যে ওয়াপদা বাঁধে যামু, সে সাধ্যও নাই আমাগোরে। তাই এইহানেই থাকা লাইগবো। আল্লায় যা কপালে রাইখচে তাই অইবো।

পূর্ব মোহনপর গ্রামের নুরন্নবী শেখ বলেন, এর আগের বানেও কাম-কাজ বন্ধ অইয়্যা ঋণ কইর্যা চলছি। এবারের বানেও তিনদিন ধইর্যা কাম বন্ধ অইয়্যা গ্যাছে। আত্মীয়স্বজনের কাছ থ্যাইক্যা ধার-কর্জ শুরু করছি। যেভাবে পানি বাইরত্যাছে তাতে কী অইবো উপর আল্লা ছাড়া কেউ কইব্যার পাইরবো না।

বাচ্চাদের নিয়ে নৌকায় করে ওয়াপদা বাঁধে যাচ্ছিলন গৃহবধূ ফরিদা খাতুন। তাদের বাড়ির সবগুলো ঘরেই পানি ঢুকেছে। নলকূপ ও টয়লেট ডুবে গেছে। বাধ্য হয়ে মালপত্র গুটিয়ে ওয়াপদায় যাচ্ছেন। ছবি: বাংলানিউজএকই অবস্থা সয়দাবাদ ইউনিয়নের দুখিয়াবাড়ী, গটিয়ার চর, সয়দাবাদ, বাঐতারাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব অংশে অবস্থিত অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের।

এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষই হতদরিদ্র তাঁতশ্রমিক। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বে হওয়ায় প্রতিবছরই কমবেশি বন্যা হয়। জুলাই মাসে যমুনার পানি ধীর গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় খুব বেশি কষ্ট না হলেও চলতি বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের হাজারখানেক পরিবার।

দু’দিনের মধ্যেই এসব গ্রামের প্রায় সবগুলো বাড়িতে পানি উঠেছে। অধিকাংশের ঘরও ডুবে গেছে। যাদের সাধ্য আছে তারা আত্মীয়ের বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা ওয়াপদা বাঁধে ঠাঁই নিতে শুরু করেছেন। তবে অতিদরিদ্রদের জন্য সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সয়দাবাদ ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চার-পাঁচদিন ধরে যমুনার পানি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এসব গ্রামের অন্তত ৩৮০টি পরিবার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রায় ছয়শ’ পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি জানান, বন্যার্তদের মধ্যে ছয় মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। মঙ্গলবার থেকে এসব চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বাংলানিউজকে জানান, আরও দুই-একদিন পানি বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।