এমন কষ্ট ও আবেগজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলেন ষাটোর্ধ্ব জুলেখা বেগম। সৈয়দপুরের ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে সবখানে এমন হাহাকারের চিত্রই মিলেছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া সহিদুল (৪৫), আম্মাজান নেছা (৫০) ও ফুরকুনি বেগম (৩৮) জানান, বহু কষ্টে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তারা। খাবার নেই। খাবার একবেলা মেলে তো আরেক বেলা মেলে না। বন্যার পানি কমে আসায় বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছে তাদের।
এদের একজন অসহায় কণ্ঠে বললেন: ‘হামার বাড়িত তো খাবার নাই বাহে। বাড়িত যায়া খামু কি!
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বন্যার পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে জেগে উঠছে পানিতে নিমজ্জিত রাস্তাঘাট। তবে এখনও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরশহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে রয়েছে।
অপরদিকে পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায় খড়খড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে সৈয়দপুর শহরের পাটোয়ারী পাড়া, বসুনিয়া পাড়া, কুন্দল, নয়াবাজার ও বাঁশবাড়ি এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। এতে এসব এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে দুই কিশোরসহ তিন জন মারা গেছে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যার পানির তোড় কিছুটা কমলেও এখনও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালের সামনে হাঁটুসমান পানি।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সৈয়দপুরের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা অনেকেই নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে যারা বেশি বিপন্ন ও হতদরিদ্র তারা বাড়ি ফিরে কী খেয়ে বাঁচবেন সেই চিন্তায় অস্থির।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন জানায়, বন্যায় এবং বাঁধ ভেঙ্গে আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে উপজেলার ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রশীদ। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে ঘুরে নগদ টাকা ও তৈরি খাবার বিতরণ করেন। শিল্প-পরিবার ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিকুল আলম বন্যার্তদের মাঝে খিচুরি বিতরণ করেছেন। সৈয়দপুর কলেজের সাবেক ভিপি মোস্তফা ফিরোজ আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, মোমবাতি ইত্যাদি বিতরণ করেন।
বন্যায় পৌরসভাসহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৬ কোটি টাকার সড়ক অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার পর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবু মোহাম্মদ সফিউল আযম জানান।
উপজেলার প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বলে জানান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপা রানী বিশ্বাস। রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর তা নিরুপণ করা সম্ভব বলে জানান সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মণ্ডল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এমএ/জেএম