ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁধ মেরামতে বানভাসি শিশুরাও

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
বাঁধ মেরামতে বানভাসি শিশুরাও শ্রমিকদের সঙ্গে বালুর বস্তাগুলো ধরাধরি-গড়াগড়ি করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে ব্যস্ত শিশুরা। ছবি: আরিফ জাহান

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শহরাবাড়ি ভুতবাড়ি অংশে ঝুঁপড়ি ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা। সেখানে একটি খড়ের পালা ও বেশ কিছু গাছপালার পাশে খেলছিলো স্কুল পড়ুয়া কয়েকজন শিশু।

এদিকে যমুনার পানি চুইয়ে বাঁধের একপাশ থেকে আরেক পাশে পানি প্রবেশ করছে। স্থানটি মেরামত করতে ভ্যানভর্তি বালুর বস্তা নিয়ে এলেন কয়েকজন শ্রমিক।

দৃশ্যটি চোখে পড়লো শিশুদের। সঙ্গে সঙ্গে খেলা ছেড়ে ওদিকে দৌড় দিলো সবাই। শ্রমিকদের সঙ্গে বালুর বস্তাগুলো ধরাধরি-গড়াগড়ি করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো শিশুর দল।

বন্যায় ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্বল ডুবে থাকায় পরিবারের সঙ্গে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ওই শিশুরা। স্কুল-পড়াশোনা বন্ধ থাকায় সারাদিন বাঁধের রাস্তায় দুষ্টুমি-খেলাধুলা করেই সময় কাটায়। তবে পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে বানভাসি অন্য নারী-পুরুষদের সঙ্গে সহায়তায় এগিয়ে আসছে তারাও।  

বাঁধের রাস্তায় দুষ্টুমি-খেলাধুলা করেই সময় কাটে ওদের।  ছবি: আরিফ জাহানবগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের উত্তরে শহরাবাড়ি ও দক্ষিণে মাধবডাঙা থেকে সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা পার হয়ে সর্বদক্ষিণে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ঢেকুরিয়া গ্রাম পর্যন্ত এই বাঁধ। ৪৫ কিলোমিটারের ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ (বিআরই) বাঁধটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমান্বয়ে উপজেলাগুলোকে যমুনার করালগ্রাস থেকে রক্ষা করে আসছিল। আর এবার আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করছে চলমান ভয়‍াবহ বন্যায় নিরাশ্রয় হয়ে পড়া বানভাসি হাজারো মানুষকে।

তবে যমুনায় পানি বাড়তেই থাকায় ও নদীভাঙনে চরম ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে বাঁধটি। বিভিন্ন অংশে ধস নামছে বা পানি চুইয়ে প্লাবিত করছে। এসব স্থান মেরামতে ও বাঁধ ভাঙা ঠেকাতে চলছে বালির বস্তা ফেলার কাজ।

শ্রমিকদের সঙ্গে এ কাজে সবার আগে ও বড়দের চেয়ে বেশি বেশি হাত লাগাচ্ছে শিশুরাই।

সরেজমিনে বাঁধের শহরাবাড়ি ভুতবাড়ি অংশে গিয়ে খেলার পাশাপাশি বাঁধ মেরামতে দেখা গেছে ওই শিশুদের। তাদের মধ্যে সজনী, সুমাইয়া, রাবেয়া ও দোলেনা প্রথম শ্রেণি, তানজিম ও স্বর্ণা দ্বিতীয় শ্রেণির এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। স্থানীয় পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওরা।

বসত-ভিটা হারিয়ে বিষন্নতায় ভরা বাবা-মায়ের মন আরও খারাপ হয়ে যায়, এই ছেলে-মেয়েরা খাবার খেতে যখন অস্থায়ী ঘরগুলোতে ফিরে আসে। খেলতে খেলতে অনেক সময় খাবার সময় পেরিয়ে যায়। তারপরও বাবা-মা ওদের সহজে খাবারের জন্য ডাকতে চান না। কারণ, চাল-ডালসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ঘরে না থাকায় প্রতি বেলায় রান্না করা হয়ে ওঠে না। ফলে প্রায়ই ঘরে খাবার থাকছে না। ঘরে যা ছিলো, তাও প্রায় শেষ বলেও জানান বানভাসি বাবা-মায়েরা।

তবে ক্ষুধার জ্বালা তীব্র হলে এসব শিশুদের আর থামানো যায় না। তখন আপনা আপনি খেলা ছেড়ে যে যার মতো ঘরে চলে যায়। খাবার পেতে মায়ের সঙ্গে ঝুট ঝামেলা করতে শুরু করে। ঘরে খাবার না থাকলে তখন আরও অসহায় হয়ে পড়েন মায়েরা। ভুল-ভাল বুঝিয়ে এসব শিশুদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন।

মা সাজেদা ও সুফিয়া বেগম জানান, ওদের স্কুলের যাওয়ার পথ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। পানি উঠেছে স্কুলের মেঝেতেও। এ অবস্থায় শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে আসেন না। ফলে স্কুলে যায় না তাদের সন্তানরাও। আর এতো পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাওয়াটা এসব শিশুদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এসব শিশুর মুখে তিনবেলা খাবার তুলেও দিতে পারছেন না মা-বাব।  ছবি: বাংলানিউজতারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মরার যমুনা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এক কাপড়ে কোনোমতে জীবন নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। বানের কারণে ঠিকমত কাজও পান না’।

‘ঘরে যে সামান্য খাবার ছিলো, তাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। আমরা না খেয়ে দিন কাটিয়ে দিতে পারলেও ওরা তো তা পারে না। কারণ, ওরা ছোট। তাই ওদের খাবার নিয়ে চিন্তাটা একটু বেশিই’- যোগ করেন এই দুই মা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।