ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাসানের প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কি?

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
হাসানের প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কি? হাসানের প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কি?- ছবি: বাংলানিউজ

ফুলছড়ি, গাইবান্ধা থেকে: সেই ভদ্রমহিলার কথা বারবার মনে হচ্ছিল। কারণ আজও চালকের ‘সাঘাটা একজন-একজন-একজন’ হাঁক শুনে উঠেছিলাম অটোরিকশায়।

তবে আজকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায়(সিএনজি)পর্দা না থাকায় দূর থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম কয়েকজন বসা। ওঠার পরও দেখি সিএনজিচালক, সাঘাটা একজন-একজন-একজন হাঁক দিয়েই যাচ্ছেন।

প্রায় পনের মিনিট পরে একজন এলেন। তবুও ছাড়বার কোনো লক্ষণ চালকের হাবভাবে দেখলাম না। তখনও সেই একই আওয়াজ। এবার অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, আমি আসার আগে যারা সিএনজিতে বসেছিলেন তারা অন্য সিএনজির চালক। যাত্রী চলে আসছেন আর একজন-একজন করে উঠে যাচ্ছেন। অর্থাৎ লোকজনকে প্রলুব্ধ করার কৌশল এটি।
হাসানের প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কি?- ছবি: বাংলানিউজ
পঞ্চম ব্যক্তির আর আগমন ঘটে না। অটোরিকশাও ছাড়ে না। প্রায় পঞ্চান্ন মিনিট পেরিয়ে গিয়ে তখন উদ্বেগ বাড়তে থাকে। সাঘাটা গিয়ে কাজ শেষ করে ফেরা নিয়ে। মনেপ্রাণে কামনা করছিলাম আনেকজন যাত্রীর জন্য। আর তখন সেদিনের সেই ভদ্রমহিলার কথা বারবার মনে পড়ছিল। এই ভেবে হয়তো সেদিন আমার মতোই অবস্থা হয়েছিলো তাদের। যে কারণে মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বরণ করেছিলেন।

গাইবান্ধায় এর আগেও এসেছি। তখন কিন্তু কোনো সিএনজির দেখা পাইনি। আর আজকে পা বাড়ালেই সিএনজি অটো। টার্মিনালগুলোতে বিভিন্ন রুটের বাস লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। জেলা সদর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন রুটের মুখে সিএনজি লাইন করে দাঁড়ানো। জায়গার নামেই বদলে গেছে সব। যেমন, সাঘাটা সিএনজি স্ট্যান্ড, সাদু্ল্যাপুর সিএনজি স্টেশন ইত্যাদি।

বাসের মতোই রুট ধরে চলাচল করে। তাদের মতোই চেইন(মালিক সমিতির চাঁদা)দিতে হয়। তবে বাস থেকে পুলিশ প্রশাসনকে মাসোহারা দেওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও সিএনজি থেকে পুলিশের জন্য নিয়মিত টাকা দিতেই হয়। এই চাঁদার পরিমাণ দৈনিক ১২০ টাকা, এর বাইরে মাসে নেওয়া হয় আরও ৩’শ। এই টাকা দিয়ে তহুরি মহুরি খরচ। যার বিনিময়ে পুলিশ প্রশাসন সবকিছু দেখেও না দেখার ভাণ করে থাকেন।

গাইবান্ধায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ নেই। উত্তরবঙ্গে গ্যাস পাইপের আখেরি স্টেশন হচ্ছে মহাস্থানগড়। তবে একটি এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। আর তাতেই রাস্তায় হুহু করে বেড়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা। অনেকে রান্নায় ব্যবহৃত এলপিজিতে চালাচ্ছেন অটোরিকশা। হাসানের প্রশ্নের উত্তর জানা আছে কি?- ছবি: বাংলানিউজ

চালক শফিকুল ইসলাম শফি জানালেন, এক গাইবান্ধা-সাঘাটা রুটেই দু'শ সিএনজি রয়েছে। দৈনিক একটি করে রাউন্ড ট্রিপ হয় তাদের। হঠাৎ কখনও কখনও বেশি হয়। গাইবান্ধা থেকে সাঘাটা পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথের জন্য প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৬০ টাকা করে আদায় করা হয়।

সে হিসেবে রাউন্ড ট্রিপে ৩’শ টাকা আয় হয় চালকদের। এখান থেকে জ্বালানি বাবদ চলে যায় এক’শ টাকার মতো। আর চাঁদা দিতে হয় ১২০ টাকা। মাত্র ৪’শ টাকা ঘরে নিয়ে যেতে পারেন।

‘তাহলে গাড়ির জমা কিভাবে দেন?’—এই প্রশ্ন রাখি। জবাবে বললেন, ‘এই রুটে মাত্র দশ-বারোটি সিএনজি ভাড়া নিয়ে চালায় অন্যরা। বাকি সবই মালিকেরা নিজেরাই চালায়। ’

জমিতে কাজ করতে পারেন না। তাই সিএনজি কিনেছেন। যা হয় তা দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে কোনোমতে সংসার চলে বলে জানালেন শফিকুল ইসলাম শফি।

ভাড়ায় চালান এমন একজন চালক হলেন হাসান মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে জানান, কমিশনের ভিত্তিতে তিনি চালিয়ে থাকেন। যা আয় হবে বিশ শতাংশ তিনি পাবেন, আর ৭৫ শতাংশ পাবেন মালিক।

হাসান আলী অটো চালান সিএনজিতে। আর এই সিএনজি ভরার জন্য তাকে যেতে হয় বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। যাতায়াতের পথে সিএনজি-নিষিদ্ধ মহাসড়ক মাড়িয়ে যেতে হয়। আর মহাসড়ক ব্যবহারের জন্য তাকে গাইবান্ধার জুমারবাড়িতে ২০ টাকা, মহিমাগঞ্জে ৪০ টাকা, সোনাতলাতে ২০ এবং মহাস্থানগড়ে ৪০ টাকা দিতে হয়। যতদিন যাবেন প্রত্যেক দিনে দিতে হয়। না দিলে মামলা দেয় পুলিশ।

হাসান মিয়ার প্রশ্ন, ‘এই টাকা কেন নেয় ভাই?’
কারো কাছে কি হাসান মিয়ার প্রশ্নের সঠিক জবাব জানা আছে?

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।