আর এই ফাঁদের সাহায্যে নদী, নালা, খাল, বিলে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা যায় খুব সহজেই। কালের বিবর্তন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাইয়ের আকার-নকশায় পরিবর্তন ঘটলেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি এখনো।
আবার আকার ও আঙ্গিকে তৈরি এ ফাঁদগুলোর রয়েছে বাহারি নাম। যেমন- চাই, বুচনা, গড়া কিংবা চরগড়া, খুচইন ইত্যাদি। আবার চাইয়ের মধ্যেও রয়েছে নামের বিভেদ। যেমন- ঘুনি চাই, কইয়া চাই, বড় মাছের চাই, জিহবা চাই, গুটি চাই ইত্যাদি।
তাই সারবছর ধরে চাই-বুচনা তৈরি করলেও বর্ষার আগ থেকে বরিশাল ও ঝালকাঠির বিভিন্ন গ্রামে এই ফাঁদ বানানোর ধুম পড়ে যায়। এ কর্মে নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। আর বর্ষার শুরু থেকে সেসব চাই বরিশালের ১০ উপজেলা ও ঝালকাঠির চার উপজেলার প্রায় অর্ধশত হাট-বাজারে বিক্রি জন্য ওঠানো হয়। এসব হাট থেকে যেমন খুচরা ক্রেতারা চাই কিনে নেন, তেমনি আবার পাইকাররা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয় কারিগরদের দেওয়া তথ্য মতে, এসব ফাঁদ তৈরিতে বাঁশ আর সুতা ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্য সৃষ্ট সংকটের কারণে সেই বাঁশের যোগান বর্তমান সময়ে অনেকটাই কম রয়েছে। যার কারণে দামও বেড়েছে। আবার ব্যয় করে আশাব্যঞ্জক আয় করতে না পারায় পেশাও ছেড়েছেন অনেকে। তারপরও এখনও বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এ চাই বানানোর কাজ চলে।
সরকারি সাহায্য আর বছর জুড়ে কাজের চাহিদা থাকলে এ পেশায় এখনও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব বলে দাবি কারিগরদের।
বরিশালের গৌরনদীর মাহিলারা বাজারের চাই ব্যবসায়ী মতি লাল বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, সারাবছর ধরেই এ বাজারে চাই বিক্রি করে থাকেন তিনি। তবে জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত চারমাস এর বেচা বিক্রি বেশি হয়।
তিনি জানান, স্থানীয় জল্লা, পীরেরপাড় এলাকা থেকে তিনি চাই কিনে আনেন। তবে কাঁচামালের দর বেড়ে যাওয়ায় এখন চাইয়ের দরটাও অনেক বেশি। তারপরও জনপ্রিয়তার হিসেব করে খুচরা ও পাইকারি বাজারের ক্রেতাদের কাছে এর কদর অনেক বেশি।
অপর ব্যবসায়ী ভক্ত রায় বাংলানিউজকে বলেন, আগে তো চাই খাল আর বিলে কিংবা ডুবে যাওয়া ফসলি খেতে পেতে রাখা হতো। সেখানে দেশীয় প্রজাতির চিংড়ি, শোল, শিং, কৈ, বাইন, খইলসা, পুটি মাছ ধরা হতো। কালের বিবর্তনে এর আকার বিভিন্ন রকম হয়েছে। এখন চাই নদীতে বেশি পানিতেও পাতা হয়। বিশাল আকারের ওই চাইগুলোতে রুই-কাতলও ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, দক্ষিণের এ অঞ্চলের গ্রামের মানুষের কাছে চাই-বুচনা আগে যেমন জনপ্রিয় ছিলো, এখনো রয়েছে। এখন তো এ অঞ্চলের চাই পাইকারি বাজার থেকে কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রিও করছেন ব্যবসায়ীরা। আর বর্তমান বাজারে আকার ও আকৃতি ভেদে এসব ফাঁদ ৭৫ থেকে ১২ শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানান চাই ব্যবসায়ী মতি রায়।
চাইয়ের জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে জানিয়ে উজিরপুরের হারতা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফাঁদ হলো মাছ ধরার সহজ একটি মাধ্যম। এতে পরিশ্রম কম হয়, শুধু মেধা খাটাতে হয়। বাজারে যতো মাছ আসে তার বেশিরভাগই জাল দিয়ে ধরা। তবে সেচ ব্যতীত দেশীয় মাছ ধরা হয় এই ফাঁদের সাহায্যে।
এখন আগের মতো অতো বেশি মাছ ধরা পড়ে না বলে জানান বানারীপাড়া উপজেলার চাষি সুলতান হাওলাদার। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বর্ষার সময় ছোট খালের মুখে, খেতের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় চাই পাতা হয়। তবে আগে যেমন মাছ পড়তো, এখন তা অনেকটা কম। আর অনেক প্রজাতির মাছ তো পাওয়াই যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এমএস/জিপি