ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘নিজে না খাইলেও গরুক খিলাইতে হয়’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
‘নিজে না খাইলেও গরুক খিলাইতে হয়’ গরুর পাশে শুয়ে চর বজরার জমির উদ্দিন। ছবি: আসিফ আজিজ

বজরা, উলিপুর, কুড়িগ্রাম: ‘গরু নিয়ে এই রাস্তায় উঠছি। গরুক খেড় কিনে খিলাইতে হয়। এক আঁটি খেড়ের দাম আগে ছিলো দু’তিন টেকা। এখন হইছে পাঁচ টেকা। নিজে না খাইলেও গরুকে খিলাইতে হয়। গরু তো অবলা জীব, বোঝে না।’

উলিপুরের বজরা গ্রামের তিস্তা সংলগ্ন বাঁধে গরু নিয়ে আশ্রয় নেওয়া শফিউল কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলে গেলেন একনাগাড়ে।
 
এ কেমন জীবন!

গোটা বাঁধজুড়ে অসংখ্য গরু, ছাগল।

চরে গরু পালন করা সহজ বলে এ এলাকায় প্রায় প্রত্যেকেরই গরু রয়েছে। চর বজরা থেকে গরু এসেছে বেশি। শফিউল আরো বলেন,আমরা অন্যের বাড়িতে পাক করে খাই, এক সন্দে না খাইলে আরেক সন্দে খাই। এখানেই থাকি।
 
সরেজমিনে বজরায় গিয়ে দেখা যায়, নিজেদের চেয়ে সবাই অনেক বেশি যত্নে রেখেছেন তাদের পোষা গরু-ছাগলগুলোকে। নিজেদের থাকার জন্য মশারি না থাকলেও গরুর জন্য রয়েছে মশারি। দিনেও রাখা হয়েছে মশারির ভিতর। নিজেদের খাবার জুটছে না প্রতিবেলা। বন্যার পানিতে ধরা মাছ, আলু খেয়ে, না খেয়ে কাটছে দিন।
 
মশারীর ভেতর গরু।  ছবি: আসিফ আজিজকিন্তু গরুর জন্য ডাবল দাম দিয়ে সবাই খড় কিনে রেখেছেন। খাওয়াচ্ছেন পেট ভরে। থাকার জন্য বাঁশ ঘিরে আলাদা ঘর কিংবা আলাদা জায়গাও করে দেওয়া হয়েছে। অথচ নিজেরা পেটভরে খেতে পারছেন না। থাকছেন বলতে গেলে গরুর সঙ্গে গায়ে গা ঘেঁষে। গরুর পাশেই বিছানা পেতে, কাঁথা বালিশ বিছিয়ে।

বাঁধজুড়ে যেনো গোয়াল।  ছবি: আসিফ আজিজতবু যেন শান্তি নেই বিলকিস বানুর। নিজে অন্যের কাছ থেকে একটি গরু এনে পালছেন। এ দুর্দিনেও মালিকের কাছে দিয়ে আসেননি। বরং আফসোস করে বলেন, কাল সারারাইত না ঘুমায় বসি আছিনু। চিন্তা হয় গরুর তক। রাইতে মশা কামড়ায়। আগে ঘাস খিলাইছিনু। এখন পেড ভরে না।
 
বাঁধজুড়ে যেনো গোয়াল।  ছবি: আসিফ আজিজচর বজরার জমির উদ্দিন আনমনে শুয়ে ছিলেন গরুর পাশে। মাথার উপরে শুধু একটি ত্রিপল। নিচে দলা পাকানো বিছানা। পাঁচটি গরু তার। নিজে মশারির বাইরে থাকলেও গরুকে রাখেন মশারির ভিতর। পাশে থাকা রশিদ, মতিউরদের অবস্থাও একই। বরং অন্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি খেয়াল রাখছেন পোষা প্রাণীগুলোর প্রতি।
 
বাঁধজুড়ে যেনো গোয়াল।  ছবি: আসিফ আজিজনিজেরা প্রাণ বাঁচাতে সরে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয় এ খোলা রাস্তায়। বাড়ি-ঘর সবই গ্রাস করেছে তিস্তার পানি। কবে ফিরে পাবেন, কি অবস্থায় ফিরে পাবেন, জানেন না কেউ। চেয়ারম্যান থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা এ কদিনে পাননি বলেন অভিযোগ তাদের। তবু নিজেদের ঘরের মধ্যে হলেও জায়গা দিয়ে খাবার দিয়ে রেখেছেন গরু-ছাগল।
 
সামনে কোরবানি ঈদ। কষ্টের সময় বিক্রি করবেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, না। বিক্রি করবো না।

তারা জানেন বেঁচে থাকলে এরাই তাদের সম্বল, অবলম্বন।

আরও পড়ুন>>
**‘আইজ  হামাক খাবার নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব’​
**রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া
** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে

** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা,আগস্ট ১৬, ২০১৭
এএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।