ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে গাইবান্ধার বন্যা

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে গাইবান্ধার বন্যা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে গাইবান্ধার বন্যা

সাঘাটা (গাইবান্ধা) থেকে: চলমান হারে পানি বাড়তে থাকলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে উত্তর বঙ্গের যমুনা নদী ঘেষা জেলা গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি। এ জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সাঘাটা ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি এরইমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাঘাটা, ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ১৯টি ইউনিয়ন এরইমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
 
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের সানকিভাঙা গ্রাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-সিএন্ডবি বাঁধের বাইরে থাকা এ গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার দিগ্বিদিক ছোটা-ছুটি করছে। ঘরে ঘরে উঠেছে কান্নার রোল।
 
স্থানীয়রা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সানকিভাঙা গ্রাম রক্ষায় নির্মিত যমুনা বেড়িবাঁধের ফাঁটল ধরা ওই অংশটি এলাকাবাসী মেরামতের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ভয়ংকর রুদ্রমুর্তিতে বাঁধটি ভেঙে যায়।
 
মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায় কয়েক হাজার একর রুপা আমন ক্ষেত। তড়িঘরি করে কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র, ধান-চাল, গবাদিপশু স্থানান্তর করতে পারলেও পুরুষলোক বাইরে থাকায় বেশিরভাগ পরিবারের নারীরা কেবল মাত্রা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুঁটেছে।
 
সানকিভাঙা গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, বাঁধ ভাঙার পর ফোন দিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু বাইরে থাকা বাড়ির পুরুষরা ফোন ধরেনি। আমার ১৫/১৬ মন ধান ঘরের মধ্যে তলিয়ে গেছে।
 গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি- ছবি: বাংলানিউজমঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে প্লাবিত এ গ্রামটিই ভরতখালী ইউনিয়নের বন্যাকবলিত অঞ্চলের বাইরে ছিল। এর সপ্তাহ খানেক আগেই এই ইউনিয়নের ভাংগামোড়, গটিয়া, চিথলীয়া, মান্দুরা, সাকোরা, উল্লাহ, পরাগ্রাম, কুকরাহাঁট, নীলকুঠি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
 
তবে এসব গ্রামের যে অংশটুকু গাইবান্ধা সাঁঘাটা সড়কের সিএন্ডবি বাঁধের পশ্চিমে পড়েছে, সেসব অংশে এখনো বন্যার পানি ঢোকেনি।
 
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের সিএন্ডবি বাঁধের অন্তত ১০টি পয়েন্ট দিয়ে যমুনা নদীর পানি শহরে ঢোকার উপক্রম হয়েছে। ওই পয়েন্টগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু-সিমেন্টের বস্তা দিয়ে পানি না ঠেকানোর চেষ্টা করছে। দফায় দফায় সেনা-বাহিনীর সদস্যরাও সিএন্ডবি বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।
 
সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ভাংগামোড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতে কোমর থেকে বুক পানি।
 
স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই কোমর বা বুক পানির নিচে তলিয়ে আছে।
 
ভাংগামোড় গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান হোসেন তার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পুরোগ্রাম ঘুরে দেখান এ প্রতিবেদককে। গ্রামের শতভাগ বাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। হাজার হাজার বিঘা জমির রুপা আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সোলেমান হোসেনের ৫৬ বিঘা আখক্ষেত রয়েছে ৮/১০ ফুট পানির নিচে।  
 
কথা হয় নিজ বাড়ির কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা ভাংগামোড় গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন শেখের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সিএন্ডবি বাঁধের বাইরে থাকায় ভাংগামোড় গ্রামে প্রতিবছরই বন্যা হয়। তবে- এ বছরের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
 গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতি- ছবি: বাংলানিউজ ফুলছড়ি-সাঘাটা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সিএন্ডবি বাঁধের যেসব পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেসব পয়েন্ট যদি ভেঙে যায় বা পানি উপচে আসে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, উদাখালী, গজারিয়া, ফুলছড়ি, এড়েন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, পদুমশহর, সাঘাটা, ভরতখালী, মুক্তিনগর, কুচাই, ঘুরিদহ, হলদিয়া, জুমাবাড়ি, কামালেরপাড়া ও বোনারপাড়া ইউনিয়নের শত শত গ্রাম তলিয়ে যাবে।  
 
অপেক্ষাকৃত কম বয়সী লোকজন বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর এতোবড় বন্যা তারা আর কখনো দেখেন নি। অন্য বছর বাড়ির নিচ পর্যন্ত পানি উঠেছিল, এ বছর তার চেয়ে উপরে পানি উঠেছে। প্লাবিত গ্রাম ও এলাকার সংখ্যাও এবার বেশি। কেবল মাত্র সিএন্ডবি বাঁধ তৈরির কারণে বন্যার পানি এখন পযর্ন্ত গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করতে পারে নি।
 
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) একই দিনে সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়নের সানকিভাঙা গ্রামে যমুনা নদীর বেড়িবাঁধসহ অন্তত চারটি বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গেছে। আগামী কয়েকদিন পানি বাড়লে আরো কয়েকটি বাঁধ ভাঙতে পারে। তখন গাইবান্ধার বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
 
উল্লা বাজারের ব্যাবসায়ী শাহ আলম বলেন, সিএন্ডবি বাঁধের যে সব জায়গা দিয়ে পানি চুয়াচ্ছে, সেসব জায়গা যদি ভেঙে যায়, তাহলে সব সয়লাব হয়ে যাবে। যমুনার পানি গাইবান্ধা শহর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
 
এদিকে ভয়াবহ এই বন্যায় যথারীতি চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন । বেড়িবাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া লোকজন খাবার পানির অভাবে আছেন। গবাদি পশুগুলো খাদ্য সংকটে রয়েছে।
 
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য গাইবান্ধা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) শুধু গোবিন্দগঞ্জে একটি বাঁধ ভেঙেছে। গাইবান্ধায় কতগুলো গ্রাম, ইউনিয়ন বা উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেটা বলতে পারবে ডিসি অফিস।
 
সানকিভাঙা গ্রামে যমুনা বেড়িবাঁধ ভাঙার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন- ওটা আমার (পানি উন্নয়ন বোর্ড) বাঁধ না। ওটা স্থানীয় সরকারের (এলজিইডি) বাঁধ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এজেড/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।