ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আতঙ্কে দিশেহারা বানভাসি মানুষ!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
আতঙ্কে দিশেহারা বানভাসি মানুষ! আতঙ্কে দিশেহারা বানভাসি মানুষ!

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে: শাহজাহান আলী। বয়স নব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছেছে। জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের চরমাইজবাড়ি গ্রাম। জন্মের পর থেকেই হিংস্র যমুনার থাবায় বহুবার বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ জীবনে অনেকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন এক সময়ের টগবগে যুবক বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ শাহজাহান আলী। প্রায় ১৫-২০ বার যমুনা তার বসতভিটা কেড়ে নিয়েছে।

তবু ক্ষ্যান্ত হয়নি যমুনা। পেট ভরেনি সর্বগ্রাসী যমুনার।

বার বার আশ্রয় হারাতে হারাতে শাহজাহান আলী শেষমেষ ঠাঁই নেন বিলচতল গ্রামে। সেখানে গড়েন বসতবাড়ি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এবারের বন্যায় সেটিও গিলে নিয়েছে যমুনা। এ অবস্থায় এই বৃদ্ধ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

বাঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বানভাসিদের অনেকের মতোই সেখানেই ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছেন এই বৃদ্ধ। ঘরের উপরে কোনোরকম ছাউনি থাকলেও চারপাশটা ফাঁকা। ভেতরটায় রয়েছে কয়েকটি গরু। একপাশে রয়েছে একটি ছোট কাঠের চকি। সেখানেই লাঠি হাতে বসেছিলেন বৃদ্ধ শাহজাহান।
শাহজাহান আলী
বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাহজাহান আলী জানান, মোট ৯ সদস্যের সংসার ছিল তার। এরমধ্যে এক সন্তান মারা গেছে। বর্তমানে স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। সবাই বিবাহিত।

অতীতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছি। নিজ চোখে অনেককেই ভিটামাটি ছাড়তে দেখেছি। কিন্তু এবারের বন্যা যেন ৮৮’র বন্যাকেও হার মানিয়েছে। দিনরাত পানি বেড়েই চলছে। বাড়ার মাত্রাও অনেক বেশি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে বাঁধ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।  

কারণ হয় বাঁধ ভেঙে যাবে নয়তো বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। সেক্ষেত্রে অন্যত্র যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই যোগ করেন এই বৃদ্ধ।  

জাহানারা, নার্গিস, টুবুলি, আমজাদসহ একাধিক বানভাসি মানুষ বাংলানিউজকে জানান, বাঁধে এসে যমুনার পানি মাঝে মধ্যেই প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারছে। পানি চুইয়ে বাঁধের একপাশ থেকে আরেক পাশে চলে আসছে। ক্রমেই বাঁধের ঝুঁকি বাড়ছে।

এ কারণে এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব মাইকিং করে বাঁধ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বলেছেন। ইতোমধ্যেই অনেকেই বাঁধ ছেড়ে চলেও গেছেন। আবার অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে নতুন করে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। জায়গা না পেয়ে বানভাসিরা চেয়ারম্যান সাহেবের কথা আমলে নিচ্ছেন না। সবমিলে বানভাসিরা এখন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে এসব ব্যক্তিরা জানান।  

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সোমবার (১৪ আগস্ট) দিন পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের তীরবর্তী অনেক বসতবাড়িতে হাঁটু পানি ছিলো। কিন্তু রাতের মধ্যেই সেসব বসতবাড়িতে কোমর পানি হয়ে যায়। ফলে রাত থেকেই যে যা পারেন তাই নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিতে থাকেন।  

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সেই দৃশ্য দেখা যায়। বুক বা অথৈই পানি মাড়িয়ে মাথায় বা নৌকাযোগে বাঁধে আসতে থাকেন অনেক নারী-পুরুষ। জেনে বুঝেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন অসহায় এসব মানুষজন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭।
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।