বৃদ্ধ, যুবক, শিশু, রোগী, ভিক্ষুক থেকে বিত্তশালী সবাই সামিল সেই পালানোর মিছিলে। সবার হাতে মাথায় নানান মাল-সামান।
মাথার বোঝার সঙ্গে কেউ নিয়েছে গরু-ছাগল, কারো হাতে তৈজসপত্র। ছোট্ট শিশুটিও খালি হাতে বের হয়নি। কিছুনা কিছু সঙ্গে নিয়েছে।
না নিয়ে যে কোনো উপায় নেই, যা নিবে হাতে তাই যাবে সঙ্গে। কারণ যা আসছে পৌরানিক দৈত্যের চেয়ে কোটিগুণে শক্তিশালী মহাদানব বলা চলে। দানবের হাত থেকে লুকিয়ে বাঁচার উপায় থাকতো কিন্তু মহাদানব রূপে অর্বিভূত যমুনার পানি যা পাবে সবই গিলে খাবে। খড়কুটো থেকে বাড়ি গাড়ি সবই তার খাবারের তালিকায়।
যা ফেলে যাবে তার কিছুই হয়তো আর ফিরে পাবে না। তাই সাধ্য নেই তবুও গরুর জন্য খড়ের বোঝাটা মাথায় তুলে নিয়েছেন বৃদ্ধা মা।
গরমে দরদর করে ঘাম ঝরছে বৃদ্ধা মায়ের শরীর থেকে। চোখের জল, আর মাথার ঘাম মিশে একাকার। তবুও যেন দাঁড়াবার জো নেই, কারণ দাঁড়ালেই নির্ঘাত মালামাল সমেত সলিল সমাধী।
সানকিভাঙার বাঁধ ভেঙেছে, হু হু করে আসছে পানি, মাত্র এক ঘণ্টায় অনেক বাড়ি তলিয়েছে। উজানে যমুনায় পানির স্তর যে পর্যায়ে রয়েছে সানকিভাঙায়, তাতে বকুল মিয়ার ঘর তলিয়ে যাবে। হাঁটু বা কোমর পানি হলে তারা এতো ভয় পেতনা বলে জানান।
সবাই ছুটছে শুকনো জায়গার খোঁজে। চোখের পলকে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিকেল ৩টায় যে পথ শুকনো ছিলো এক ঘণ্টা পর সেখানে বুক পানি জমল চোখের সামনে।
যে বাঁধে লোকজন পিঁপড়ার সারির মতো ছুটে আসছে, সেখানেও কিন্তু তিল ঠাঁই নেই। আগে তলিয়ে যাওয়া গ্রামের লোকজন তাবু গেড়েছে। বিকেল ৪টা দিকে অনেকরে পানিবন্দি হয়ে আটকা পড়তে দেখা গেছে। অনেকে বাঁচার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এসআই/এসএইচ