প্রতিনিয়ত চোখের সামনে বিভিন্ন দুর্ঘটনা দেখা, অফিস যেতে দেরি হওয়া, বৃষ্টির দিনে কাদা পানিতে একাকার আর শুকানোর সময় ধুলোর ঝড়। এমন দৃশ্য যদি সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনেই মাসের পর মাস দেখতে হয় তাহলে নাগরিক হিসেব ক্ষোভ প্রকাশ করে একথা তিনি বলতেই পারেন।
তবে অনেকেই আবার কর্তাব্যক্তিদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। ‘কী বলতে কি বলে ফেলবো! আবার কোন ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হয় কে জানে!’—এমন মনোভাব শান্তিপ্রিয় অনেক নাগরিকের। তারা তাই সাবধানী।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান লিংকরোডের মোড়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী ওমর ফারুকের সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তার এমন করুণ দশা মাসের পর পর ধরে চলছে। আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে যাতায়াত করি। নিজের যেমন কষ্ট তেমনি বাইকও ঘন ঘন নষ্ট হয়। সিটি করপোরেশনের এলাকার মধ্যেই রাস্তার এই অবস্থা। অন্য এলাকায় তো অবস্থা রীতিমতো নারকীয়। অনেক রাস্তায় গভীর গর্ত ও খানাখন্দ। অথচ কর্পোরেশনের কোনো গরজই নেই রাস্তাগুলো মেরামত করার ব্যাপারে। আমারতো মনে হয়, রাজধানী ঢাকার এসব রাস্তাঘাটের কোনো অভিভাবক নেই।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনের রাস্তারই এমন করুণ দশা। এখানে মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু করে নাবিস্কোর সামনের মোড় পর্যন্ত রাস্তা অসংখ্য থানা খন্দে ভরা। কোথাও আবার খানাখন্দ এতো বড়ো আর গভীর হয়েছে যে, দেখে মনে হয় ছোটো আকারের জলাশয়।
তবে রাস্তার পূর্ব পাশের লেন রেল গেট থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ভালো হলেও সেখান থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া পশ্চিম পাশের লেনে পুরো রাস্তাজুড়েই এমন খানা খন্দে ভরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই খানা-খন্দের কারণে এখানে প্রায়ই ছোট-বড়ো দুর্ঘটনা ঘটে। আর যানজট তো লেগেই থাকে।
রেলগেট থেকে টার্মিনালের দিকে কিছু সময় হাঁটতে না হাঁটতেই চোখে পড়ে ২২/২৪ বছরের এক যুবক রিক্সা ঠেলে গ্যারেজের দিকে যাচ্ছেন। তার রিক্সার পেছনের ডান পাশের চাকা বাঁকা হয়ে আছে।
কারণ জানতে চাইলে আল-আমিন নামের ওই রিক্সাচালক বাংলানিউজকে বলেন, আমি একজন রোগী নিয়ে টার্মিনালে যাচ্ছিলাম। পথে গর্তে চাকা আটকে গেলে একটি বাস এসে পেছন থেকে ধাক্কা মেরেছে। তবে যাত্রীর কোনো ক্ষতি হয়নি।
মহাখালী বাস টার্মিনালের সাথেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস। অফিসের সামনের সড়কই এমন বেহাল! একটুখানি মেরামত করার গরজই নেই কারো। জনগণের দুর্ভোগে কর্তাব্যক্তিদের কীইবা আসে যায়! এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়লেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা।
তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাস্তা সংস্কারের বাজেট হয়ে গেছে এবং কাজও শুরু হয়েছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
এবিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অফিসের সামনের রাস্তার অবস্থা খারাপ এটা ঠিক। তবে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ২০/২৫ দিন আগে থেকে ফুটপাতের কাজ শুরু হয়েছে। আর রাস্তার সংস্কারকাজ অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। সাত রাস্তা থেকে মহাখালী মোড় পর্যন্ত রাস্তার কাজ হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।
তবে বৃষ্টি কমলে ১০/১৫ দিনের মধ্যেই রাস্তা চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে বলেও দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়:১৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এসআইজে/জেএম