মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে নেয়া রিডিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এর আগে সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে এ নদীতে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
ফলে নদী সংলগ্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এবং এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা। বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
তবে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানিয়েছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, দুই একদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন শুধু সর্তক থাকতে হবে, যাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়ে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, আত্রাই নদীতে ১২ দশমিক ৬৫ মিটার বিপদসীমা হিসেবে ধরা হয়। সেখানে সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সিংড়া ব্রিজ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফেরিঘাট এলাকায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে।
রাত একটার পর থেকে তা ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ভারতে বন্যার কারণে আমাদের নদীতেও পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরো দুই তিনদিন এই অবস্থা থাকতে পারে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিংড়া উপজেলার উত্তর দমদমা, ফেরিঘাট এলাকা, কলম, বিলদহর, কালিনগরসহ আত্রাই নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। কোনো কোনো বাড়ির উঠান ও আশপাশ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই বন্যার সময় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। ভয়ের কিছু হয়নি, শুধু চলাচল ও কাজ কর্ম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ এতটুকু পরিস্থিতিও খারাপ হতো না, যদি নদীতে বাদাই জাল দিয়ে পানি প্রবাহ বাধা সৃষ্টি না করা হতো। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় প্রভাশালীরা এই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিংড়া ব্রিজ থেকে বিলদহর পর্যন্ত অন্তত ২৬টির মত সোঁতি জাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন। এতে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নদীতে অবৈধ সোঁতি জাল অপসারণের ব্যাপারে জেলা আইনশৃংখলা সভায় দাবি তুলেছিলেন এলাকাবাসী। এরপর জাল অপসারণের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব অবৈধ সোঁতি জাল অপসারণ করতে হলে র্যাবের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ যারা অবৈধ সোঁতি জাল পেতেছেন তারা প্রভাবশালী। তবে পৌর এলাকার মধ্যে এসব জাল তিনি নিজে অপসারণ করেছেন।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে জানান, পানি বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জন্য ১৩ জন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন এবং উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করবেন।
এছাড়া ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেন এলাকা প্লাবিত হলেই তারা কন্ট্রোল রুমকে জানান।
পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ত্রিশ মেট্রিক টন চাল ও জিআর ক্যাশ বাবদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ও জেলা প্রশাসকে অবহিত করা হয়েছে। তারাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। সোঁতি জাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট, ২০১৭
আরএ