ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৮৮’র বন্যার চেয়েও এবার বেশি পানি বেড়েছে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
৮৮’র বন্যার চেয়েও এবার বেশি পানি বেড়েছে ৮৮’র বন্যার চেয়েও এবার বেশি পানি বেড়েছে/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভারতে অতিবৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এবার যমুনার পানি বেড়েছে। এমনকি ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়েও বেশি পানি বেড়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানিও স্মরণকালের সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতিমধ্যে পানির প্রবাহে প্লাবিত হয়েছে সাড়ে ৩শ’র বেশি ইউনিয়ন। আক্রান্ত হয়েছে ২০টি জেলা।

প্লাবিত হচ্ছে আরো নুতন জেলা। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে- এবারের বন্যায় ৩৩টি জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, আগামী পাঁচ দিনে দেশের দক্ষিণাঞ্চলও প্লাবিত হবে। তবে ভারতে আর বৃষ্টিপাত না হলে এরমধ্যে পানি বাড়ার হার যমুনায় স্থিতাবস্তায় চলে আসবে। আর ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রায় স্থিতাবস্তায় চলে এসেছে। এখানে স্থিতাবস্থায় চলে এলে যমুনাতেও আসবে।
 
আগামী পাঁচদিনে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার অববাহিকার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, সেরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ি ও আরিচায়। ইতিমধ্যে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুরে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে।
 
এফএফডব্লিউসি’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বাংলানিউজকে জানান, এবার বন্যার পানি অতীতের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়েছে। বিশেষ করে বাহাদুরাবাদে যমুনার পানি বাড়ার হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে এটা কমে এসেছে। আবার ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারীতে স্মরণকালের সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। ভারতে আরো বৃষ্টিপাত না হলে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পানি বাড়ার হার স্থিতাবস্তায় চলে আসবে।
 
পানি স্থিতাবস্তায় চলে এলে বোঝা যাবে কতটা প্লাবিত হলো। বন্যা বিষয়টা সামগ্রিক, তাই এখনই বলা সম্ভব নয়, সামগ্রিকভাবে এটা আগের চেয়ে কতটা বেশি বা কম বড়।
 
সাগরে যদি উজান-ভাটায় কোনো সমস্যা না হয়, তবে পানি নামতে বেশি সময় লাগবে না। তাই বন্যা পরিস্থিতি কতটা দ্রুত উন্নতি হবে, তা আসলে ভারতের বৃষ্টিপাত এবং সাগরে পানি নেমে যাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
 
এফএফডব্লিউসি আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আত্রাইয়ের পানি বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার উপরে, সিংড়ায় ৭১ সেন্টিমিটার, করতোয়া-আত্রাই-ঘাঘটের পানি বাঘাবাড়িতে ১১২ সেন্টিমিটার আর নওগাঁয় ছোট যমুনার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
 
ঘাঘটের পানি গাইবাবন্ধায় বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপরে, ধরলার পানি প্রবাহিত হবে কুড়িগ্রামে ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারীতে বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদে ১৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সারিয়াকান্দিতে ১১৯ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ১৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সেরাজগঞ্জে ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, পোড়াবাড়িতে ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং আরিচায় ১১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
 
পুরাতন ধলেশ্বরীর পানি জগিরে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ধলেশ্বরীর পানি কালাগাছিয়ায় ১১৭ সেন্টিমিটার, কালিগঙ্গার পানি তারাঘাটে ৬৯ সেন্টিমিটার ও টঙ্গি খালের পানি টঙ্গিতে প্রবাহিত হবে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
বুড়িগঙ্গার পানি ঢাকার হরিহারপুরে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বালু নদীর পানি ডেমরায় ১২ সেন্টিমিটার, লক্ষ্যার পানি নারায়ণগঞ্জে ২৭ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরির পানি এলাশিনঘাটে ১১৩ সেন্টিমিটার, লক্ষ্যার পানি লাখপুরে ১০৩ সেন্টিমিটার এবং মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরীরর পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
 
তালবাড়িয়ায় গঙ্গার পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং বিপদসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে গোয়ালন্দে পদ্মার পানি।
 
এছাড়া পদ্মার পানি ভাগ্যকূলে ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং মাওয়ায় প্রবাহিত হবে বিপদসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
গড়াইয়ের পানি কামারখালিতে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে আর সুরেশ্বরে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
 
সিলেটে সুরমার পানি প্রবাহিত হবে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে আর সুনামগঞ্জে প্রবাহিত হবে ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
কুশিয়ারার পানি শেওলায় বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে আর শেরপুর-সিলেটে ৬ সেন্টিমিটার আর দিরাইতে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
 
এদিকে মেঘনার পানি নরসিংদীতে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বাইদের বাজারে ৮৭ সেন্টিমিটার এবং মেঘনা ব্রিজে প্রবাহিত হবে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
 
অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ওপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় গত কয়েকদিন থেকেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা আরো অব্যাহত থাকবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।