ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানিতে দেশি বাদশা বনাম বিদেশি বাহাদুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
কোরবানিতে দেশি বাদশা বনাম বিদেশি বাহাদুর কোরবানিতে দেশি বাদশা বনাম বিদেশি বাহাদুর, ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: লেজের শেষ ভাগ, শিং ও কানের কিছু অংশ বাদে বিশালদেহী গরুটির সমস্ত শরীর লালে মোড়া। ছোট ছোট পা ও দু’টি শিং এবং বুলবুলির পাখির মতো উঁচু ঝুটি সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।  গলার ঝুল, মাটি ছুঁই ছুঁই বাহারি লেজ।

মেজাজ বেজায় গরম ও সাহেবি ভাবের এই লালদেহী গরুর নামটিও বেশ চমৎকার- ‘বাদশা’। আচরণেও বাদশাহি ভাব।

তবে এটি খাঁটি দেশি গরু। ভিনদেশি কোনো ব্রিড ব্যবহার করা হয়নি, মূলত দেশি উন্নত জাতগুলোর সংমিশ্রণে উৎপাদন করা হয়েছে বাদশাকে।

অন্যদিকে পাকিস্তানি শাহিওয়াল প্রজাতির গরুটির সাদা শরীরে কালো ছোপ ছোপ ডোরা কাটা দাগ। অত্যধিক বড় চূড়া, ঝুলে থাকা বৃহদাকার গলকম্বল, প্রায় মাটি ছোঁয়া বেশ লম্বা লেজ ও  লেজের আগায় দর্শনীয় একগোছা কালো লোমও আকর্ষণীয়। ক্রসব্রিডিংয়ে জন্ম নেওয়া ভিনদেশি বিশালদেহী এ গরুর নাম রাখা হয়েছে ‘বাহাদুর’।

আদি জন্মস্থান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শাহিওয়াল জেলায় হলেও ভারতসহ অনেক দেশে এ জাতটির বিস্তার রয়েছে। কোরবানিতে দেশি বাদশা বনাম বিদেশি বাহাদুর, ছবি: জি এম মুজিবুররাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের ভাঙা মসজিদের পশ্চিম দিকে ‘দ্য হাম্বা ফ্যাক্টরি’ গরুর খামারে বাদশা ও বাহাদুরের দেখা মিলেছে। খামারটিতে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে,  দু’টি গরুই এবারের ঈদ-উল আযহায় বিক্রি করা হবে।

এবারের কোরবানিতে দেশি বাদশার সঙ্গে পাল্লা দেবে পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের বাহাদুর। পশু দু’টির বিনিময়ে যথাক্রমে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ও সাড়ে ৬ লাখ টাকা দাম পাওয়ার আশা করছেন এগুলোর মালিক দ্য হাম্বা ফ্যাক্টরির পরিচালক কাজী শাহজাদ।

কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া বাদশা ও বাহাদুরকে নরসিংদীর ‘দ্য হাম্বা ফ্যাক্টরি’ থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ শাখায় আনা হয়েছে। চার দাঁতের গরু দু’টির বয়সও চার বছর।

বিশালদেহী বাদশার ওজন  এখন ৯০০ কেজি বা সাড়ে ২২ মণ। উচ্চতা পাঁচ ফুটের ওপরে, লম্বায় ১০ ফুট। অল্প বয়সেই হাতির মতো দেখতে হয়েছে এটি। অন্যদিকে বাহাদুরের ওজন ৮৫০ কেজি বা ২১ মণ ২৫ কেজি।

ধীর ও শান্তভাবে মোটাসোটা ভারী দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও লাল-সাদা রশি বাদশার নাকের ভেতরে। তাকে নিয়ন্ত্রণেই নাক বেয়ে গলায় মোড়ানো নাইলনের শক্ত রশি। কারণ, মাঝে-মধ্যেই পাগলামি করে বিশালদেহী গরুটি।

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের এক চাষি পরিবার দ্য হাম্বা ফ্যাক্টরিতে লালন-পালন করছে বাদশা ও বাহাদুরকে। ঘড়ির কাঁটা মেনে খাবার দিতে হয়, সকাল ৮টা, বিকাল ৩টা এবং রাত ৮টার সময় পেট পুড়ে খায় গরু দু’টি। একটু নড়চড় হলেই সমস্যা, বেঁকে বসে ওরা। প্রতিদিন গম, ভুট্টা, খেসারির ভুসি, কাঁচা ঘাস ও খড় খেতে দিতে হয়। সঙ্গে চিটাগুড়ও থাকে। দৈনিক খাবার লাগে ১৮ থেকে ২০ কেজি।

তিনবেলা ডেটল, সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। গোসলের পর গা মুছে দিয়ে নারিকেল তেল মাখানো হয়। এর পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা ফ্যান ঘোরে মাথার ওপরে। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় থাকার স্থানটিকে। কোরবানিতে দেশি বাদশা বনাম বিদেশি বাহাদুর, ছবি: জি এম মুজিবুর

কাজী শাহজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দেশি গরু (বাদশা) আমার কাছে আছে। কুষ্টিয়া থেকে কেনা গরুটি আমাদের দেশের বড় অর্জন। সন্তানের মতো যত্ন করে রাখা হচ্ছে বাদশাকে। পাশাপাশি রয়েছে নির্ভেজাল পাকিস্তানি শাহিওয়াল (বাহাদুর)। বাহাদুরের জাত পাকিস্তানের হলেও ক্রসব্রিডিংয়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই’।

দেশি বাদশা ও ভিনদেশি বাহাদুরের ক্রেতা চাহিদা আকাশচুম্বি বলেও দাবি তার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

ষাঁড় নয়, যেন ৩০ মণ এক পাহাড়!

সৌন্দর্যে রাহাবি, স্বাদে বারবারি ছাগল মাতিয়েছে ঢাকা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।