ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘পাকা রাস্তার উপর বানের পানি বাপের জনমেও দেখিনি’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
‘পাকা রাস্তার উপর বানের পানি বাপের জনমেও দেখিনি’  আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিতে যাচ্ছেন বন্যার্তরা

কুড়িগ্রাম: পাকা রাস্তার উপর বানের পানি উঠতে বাপের জনমে দেখিনি। রাস্তার উপর দিয়ে যেভাবে বানের পানি যাচ্ছে হাটাই যাচ্ছে না। বাড়ি-ঘর সব ডুবে গেছে। জীবন বাচাঁতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি। 

কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের কাঁঠালবাড়ি এলাকায় হাটু পানি মারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে যেতে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন পঁচাত্তর বয়সী বৃদ্ধ মনি বালা।  

তার বাড়ি সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের রামরতন গ্রামে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তার গ্রামসহ আশেপাশের সবগুলো গ্রামেরই ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে।  

সোমবার (১৪ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬টায় সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১১৯ সোন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার, নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানান কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম।
 রাস্তার  উপর বসেই শুকনো খাবার খাচ্ছেন বন্যার্তরা
সরেজমিনে কাঁঠালবাড়ি ও ছিনাই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত পরিবার।  

দেখা যায়, আশ্রয় নেতা বানভাসীদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন স্থানীয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী। তা দিয়ে ক্ষুদা নিবারণ করছেন তারা।  

রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের রামরতন গ্রামের গৃহবধূ বিনা রাণী (৩৫) বাংলানিউজকে জানান, দু’দিন ধরে বাড়িতে পানি উঠছে। স্বামী-সন্তানসহ রাস্তার পাশে কোনো রকমে আশ্রয় নিয়ে আছি। তাড়াতাড়ি পানি না নামলে তো বাড়িতেও ফেরা যাবে না। তাই নিরাপদ কোনো আশ্রয়ের চিন্তা করতে হবে।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯টি উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ।

 রাস্তার  উপর বসেই শুকনো খাবার খাচ্ছেন বন্যার্তরা

বন্যার পানিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে। তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত। পানির প্রবল তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি।

কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থল বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলানিউজকে জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১১ লাখ টাকা ও ৫শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে জেলার সকল পর্যায়ের সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।  

এছাড়া যেখানে যা প্রয়োজন সব ধরণের উদ্যোগ তাৎক্ষনিকভাবে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
বিএস  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।