ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চুইয়ে ঢুকছে পানি, যে কোনো মুহূর্তে ভাঙবে যমুনার বাঁধ!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
চুইয়ে ঢুকছে পানি, যে কোনো মুহূর্তে ভাঙবে যমুনার বাঁধ! সারিয়াকান্দিতে বাঁধের বাইরে থাকা জনপদে বন্যার পানি ছুঁয়েছে ঘরের চাল

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) থেকে: উত্তরে সোনাতলা উপজেলা। দক্ষিণে ধুনট উপজেলা। মাঝে সারিয়াকান্দি উপজেলা। হিংস্র যমুনার পানি ঠেকাতে বগুড়ার এই তিন উপজেলায় যমুনার পূর্বপাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৪৫ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ (বিআরই) বাঁধ।

সোমবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে সেই পানি ভেতরে ঢুকে পড়ছে।

বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের গর্তের (র‌্যাট হোল) কারণে পুরো বাঁধটি বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই পয়েন্টে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে যমুনার প্লাবনে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলাসহ, বগুড়া জেলার ধুনট, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সোনাতলা, শেরপুর উপজেলাসহ বগুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ বন্যাক্রান্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ইতোমধ্যেই ঝুঁকির মাত্রা অনুধাবন করে ধুনটের ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন শ্যামল তালুকদার ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করে মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আতঙ্কগ্রস্ত মানুষদের অন্যত্র সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার বিকেলে, বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বাঁধটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা নিশ্চিত করে জানান, রোববার (১৩ আগস্ট) থেকেই তিনি অবস্থান করছেন বাঁধের ওপর। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধেরও ঝুঁকি বাড়ছে।
সারিয়াকান্দিতে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার কাজ; ছবি- আরিফ জাহান
তিনি জানান, বাঁধের একাধিক পয়েন্টে ঈঁদুর গর্তের সৃষ্টি করেছে। ওইসব পয়েন্ট দিয়ে পানি চুইয়ে অপর পাশে যাচ্ছে। এ কারণে বাঁধের ওইসব পয়েন্টগুলো জরুরিভাবে মেরামত করা হচ্ছে। পাইলিং করা হচ্ছে। বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পানির লেভেল আর না বাড়লে তারা বাঁধটি রক্ষা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে পানির লেভেল আরও বেড়ে গেলে বাঁধ রক্ষা করা দুরূহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সবমিলিয়ে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ৪৫ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ (বিআরই) বাঁধের পুরোটাই বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও স্বীকার করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

এদিকে বাঁধ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্রের পানির তীব্র গতির স্রোত বাঁধের পূবাংশের গোড়া থেকে মাঝ বরাবর প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারছে। ক্রমেই সেই ধাক্কার মাত্রা বাড়ছে। এতে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে চিড় দেখা দিয়েছে। এছাড়া ইঁদুরের সৃষ্ট গর্ত হয়ে পানি চলে আসছে বাঁধের পশ্চিমপ্রান্তে। সঙ্গে বাঁধের বালুও বেরিয়ে আসছে। এ কারণে সৃষ্ট গর্তগুলো সময়ের ব্যবধানে বড় আকারের ফুটোয় পরিণত হচ্ছে।

ফলে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের মাঝে বাড়ছে আতঙ্ক। পাশাপাশি বাঁধের পশ্চিমপ্রান্তে গড়ে ওঠা জনপদের মানুষগুলোও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন।  এ পরিস্থিতিতে তারা বাঁধ রক্ষায় সেনা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।