প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এভাবেই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটারের সৈকতটি ও এর বিস্তীর্ণ উপকূলীয় জনপদ।
দ্রুত বালুক্ষয় রোধ করা না গেলে সমুদ্রসৈকত ঘিরে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন ও বালুক্ষয়ে উপড়েপড়া গাছের শেকড় ও বিভিন্ন স্থাপনার ভাঙা অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সৈকতজুড়ে। ভাটার সময় দেখা গেলেও জোয়ারের সময় সেগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে। ফলে ঝুঁকির মধ্যেই সৈকতে ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকরা।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি বাড়ছে, বিরুপ আবহাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে ঢেউয়ের তাণ্ডবও। ফলে সৈকতের প্রশস্ততা কমছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে উপকূলের অপরূপ সৌন্দর্যের এ বেলাভূমি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৬ সালকে সরকার ‘পর্যটন বর্ষ’ ঘোষণা করায় এবং ‘বিচ কার্নিভাল’ হওয়ায় তারা ঘুরে দাড়ানোর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, অব্যাহত ভাঙনে তা ভেঙে যাচ্ছে।
তারা জানান, একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার মনোরম বিরল দৃশ্যের আকর্ষণে সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে কুয়াকাটা। সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে গত দু’বছরে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে আরো কয়েকগুণ।
তবে সিডর, আইলা, রোয়ানুসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গত কয়েক বছর ধরে সৈকতের বালু ঢেউয়ের সঙ্গে সরে গিয়ে উপকূলীয় বেষ্টনী বা বিচ সংলগ্ন বনের গাছ-পালা উপড়ে পড়ছে। অব্যাহত ভাঙনে হারিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরের সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনার অস্তিত্ব। বিলীন হয়ে গেছে ‘সৈকতের সৌন্দর্য’ খ্যাত ফয়েজ মিয়ার ‘ফার্মস অ্যান্ড ফার্মস’ এর সারি সারি নারকেল, ঝাঁউ, তাল, সেগুন, লেবু গাছের বাগানও।
চলতি বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে এ ভাঙন আরো তীব্র হওয়ায় এখন সৈকত লাগোয়া নারকেল বাগানসহ জাতীয় উদ্যোনের গাছপালাগুলোও উপড়ে পড়ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটার মূল রক্ষা বাঁধসহ সবুজ বেষ্টনী। বিলীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা হোটেল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো। আর সৈকতঘেঁষে বসা ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তো বার বার জায়গা পরিবর্তন নিয়েই বছরজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সৈকতের পাশাপাশি উপকূলীয় রামনা বাঁধ চ্যানেল, আগুনমুখা, বুড়া গৌরাঙ্গ, তেঁতুলিয়া ও পায়রা নদীসহ সাগর সংলগ্ন এলাকার ভাঙনের তীব্রতা বিগত সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি বলেও দাবি স্থানীয়দের। তীব্র ভাঙনে এসব নদী তীরবর্তী এলাকার বেড়িবাঁধ ও ফসলি জমি প্রায়ই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। লোকালয়ে লবণ পানি ঢুকে চাষাবাদকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঢেউয়ের সঙ্গে বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা, সরে যাচ্ছে বিচের বালু। ভেঙেই চলেছে সাগরপারের স্থাপনাসহ নদীর মোহনা সংলগ্ন বেড়িবাঁধও। শুরু থেকেই বিষয়গুলো দৃশ্যমান হলেও রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, দেশজুড়ে চলমান উন্নয়ন আর বিনিয়োগের সময়টাতে যদি কুয়াকাটায় এমন ভাঙন অব্যাহত থাকে, তাহলে এখানকার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের অবস্থা কি হবে? দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ব্যবসায়ী-পর্যটকদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও।
তবে বিচ রক্ষা প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ অগ্রসরমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের। তিনি বলেন, পাশাপাশি বর্তমান অবস্থাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এমএস/এএসআর