তিনি বলেন, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২০টি জেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলোর ৩৬৫টি উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৮ সালের থেকে বেশি বন্যা হলেও তা মোকাবেলায় সরকারের সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা প্লাবিত এবং বন্যা হতে পারে এমন ৩৩টি জেলায় ১০ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চাল, তিন কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বন্যা প্লাবিত উপজেলায় ইতোমধ্যে ৯৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে সরকার। পানিতে ডুবে যাওয়াসহ সাপের কামড়ে ২০ জন মানুষ মারা গেছেন।
এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ঢাকার নিম্নাঞ্চলসহ নয় জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন মন্ত্রী। এজন্য নদী অববাহিকার জেলা মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ভোলায় বন্যা হতে পারে।
এছাড়া মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ, যশোর ও বরিশালেও বন্যা হতে পারে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, উজানের দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানে স্মরণকালের মারাত্মক বন্যা হয়েছে। উজানের দেশে বন্যা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আর উজানের দেশসমূহে বন্যা হলে ভাটির দেশ হিসেবে উজানের প্রভাব আমাদের উপর পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তার আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি এবং মানুষের সহনশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা ও ত্রাণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে বন্যা মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরে মন্ত্রী মায়া বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এবং মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি ছুটিসহ সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বন্যা প্রলম্বিত হলেও খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীর অভাব হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পূর্বের বন্যাসহ এ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিকটন চাল এবং পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য পাঁচ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও মেরামতের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় নয়টি মোবাইল পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট পাঠানো হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও পাঠানো হবে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরকে টিউয়েলগুলোকে আরও উঁচু করে দেওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
বন্যা কবলিত জেলায় প্রত্যেকটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া ছাড়াও প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী মায়া বলেন, বিদেশে বসে ফাঁকা বুলি না ছেড়ে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন।
সংবোদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও রাঙামাটিসহ ২০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআই