ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ফিরে এসেছে হাতাঅলা পলিব্যাগ!

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
ফিরে এসেছে হাতাঅলা পলিব্যাগ! ফিরে এসেছে হাতাঅলা পলিব্যাগ। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, মজুতকরণ ও সংরক্ষণ ২০০২ নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারাদেশে কমে গিয়েছিল এর ব্যবহার। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষ করে পলিথিনের হাতঅলা ব্যাগের ব্যবহার কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে। তবে বছরখানেকের মধ্যেই এই চিত্র পাল্টে যায়। সবখানে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ দূষণকারী, ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে অচল-করে-দেওয়া আর জমির উর্বরতা বিনষ্টকারী এই পলিব্যাগ।

নিষিদ্ধ করার এক বছর পরে থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হতে থাকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। এখন সেটা বাড়তে বাড়তে চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

পুনরায় পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়েছিল হাতল ছাড়া ব্যাগ দিয়ে।

এখন তা বাজার সয়লাব করে দিয়েছে। যা এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে আরো আকর্ষণীয় রূপে, সহজে ব্যবহারযোগ্য রূপে তা ফিরে এসেছে বাজারে । আর পলিব্যাগের নতুন এই রূপটি হচ্ছে হাতাঅলা পলিব্যাগ। অভিজাত দোকান থেকে ফুটপাত, বাজার সবখানেই এসব দৃষ্টিনন্দন অথচ ক্ষতিকর পলিব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। রাজধানীতে যা এখন মাত্রাছাড়া পর্যায়ে চলে গেছে।

বুধবার(৯ আগস্ট)রাজধানীর মিরপুর-১ নাম্বার ও কারওয়ানবাজার এলাকা ঘুরে এমন নেতিবাচক চিত্র দেখা গেল।

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকা দুইটির সব পাইকারি পলিথিন ব্যাগের দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে হাতাঅলা পলিব্যাগ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে এর ব্যবহার। হাতা ছাড়া পলিথিনের ব্যাগের পাইকারি বিক্রি খোলামেলা চললেও কিছুটা সাবধানতার সঙ্গেই বিক্রি হচ্ছে হাতাঅলা পলিব্যাগ। কিছুটা লুকিয়ে হলেও দোকানি ও ক্রেতারা এর বিক্রি ও ব্যবহার করছেন অবাধে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নাকের ডগায়।

পলিথিনের এই হাতাঅলা ব্যাগের ব্যবহার সব থেকে বেশি হচ্ছে প্রসাধনীর দোকান, ফলের দোকানগুলোতে। ক্রেতারা পণ্য কিনে এইসব দোকান থেকে বেশিরভাগ সময়ই হাতাঅলা পলিথিন ব্যাগে পণ্য ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। দেখতে সুন্দর আর ব্যবহার উপযোগী বাহারি এসব ব্যাগ কিন্তু তৈরি করা হচ্ছে খুবই নিম্নমানের পলিথিন দিয়ে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি।
ফিরে এসেছে হাতাঅলা পলিব্যাগ।  ছবি: জিএম মুজিবুর
হাতাঅলা পলিব্যাগের ব্যবহার আবার শুরু হওয়া সম্পর্কে পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতাঅলা পলিব্যাগের গ্রাহক চাহিদা খুবই বেশি। তাই পাইকারি দোকানিরা সে অনুযায়ীই কারখানাগুলোকে চাহিদা জানাচ্ছেন। কারখানাগুলো বেশি বেশি করে হাতাঅলা পলিব্যাগ বানাচ্ছে।

হাতাঅলা পলিব্যাগের চাহিদা কেনে বেড়েছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, হাতা ছাড়া পলিব্যাগে পণ্য বহনে ক্রেতাদের সমস্যা হয়। সেই জন্য ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে হাতাঅলা ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে।

পলিব্যাগ নিষিদ্ধ করে গালভরা আইন থাকলেও পলিব্যাগ ব্যবহারে এখন একদমই কোনো সমস্যা হয় না। সরকারি লোকেরা বাধাও দেয় না। তাই এই ব্যাগের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। শাস্তির ব্যবস্থা ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে তারাও একাজ করতেন না।

এ বিষয়ে মিরপুর-১ নাম্বারের পলিব্যাগের পাইকারি বিক্রেতা মো. সুমন বাংলানিউজকে বলেন, অবাধে এখন পলিব্যাগের ব্যবহার বেড়েছে। ধীরে ধীরে আবার হাতাঅলা পলিব্যাগ ফিরে এসেছে। তাছাড়া যে সব দোকানি আমাদের কাছ থেকে পলিব্যাগ কিনতে আসেন তারা এখন হাতাঅলা ব্যাগই বেশি চান।

কাওরানবাজারে পলিব্যাগের পাইকারি ব্যবসায়ী মো.শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, হাতাঅলা পলিব্যাগ বিক্রি করতে কিছুটা সমস্যা হয় তবে, সিস্টেম করে চলতে হয়। স্থানীয় নেতা ও পুলিশকে টাকা দিলেই আরও কোনো সমস্যা হয় না। তারা তখন আর বিরক্ত করে না।

প্রসাধনী সামগ্রী কিনে হাতাঅলা পলিব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন সুমন রহমান নামের মিরপুর-১ নাম্বারের এক ক্রেতা।
প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিব্যাগ।  ছবি: জিএম মুজিবুর
এ প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও সবাই ব্যবহার করে। আর ব্যবহার যেহেতু করে তাহলে হাতাঅলা ব্যাগ ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় আগের তুলনায় পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বেড়ে গেছে। কোনো ধরনের পলিথিনই পরিবেশবান্ধব নয়। ‘বিকল্প ব্যবস্থা নেই’—এমন খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০০২ সালে যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তখন মানুষ কীভাবে চলেছে?

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারওয়ার ইমতিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। যেখানে যখন প্রয়োজন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা আগস্ট ১৪,২০১৭
এমএসি /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।