ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ভারত থেকে গরু আনা বন্ধ হলে সীমান্তে হত্যা কমবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
‘ভারত থেকে গরু আনা বন্ধ হলে সীমান্তে হত্যা কমবে’ আলোচনা সভার বক্তারা/ ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: ভারত থেকে গরু আনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। গরু আনা বন্ধ করলে সীমান্তে হত্যা কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

রোববার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর ইস্কাটনে বিআইআইএসএস মিলয়তনে ‘আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তা: সমস্যা এবং সহযোগিতা বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ অভিমত দেন কক্তারা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসেইন বলেন, গরু সরবরাহ বন্ধ করে ভারত সরকার ভালো করেছে।

আমরা চাই, গরু আনা শতভাগ বন্ধ হোক। এক সময় আমাদের এখানে মুরগি ছিলো না। এখন মুরগি উৎপাদন অনেক। ছয় মাস অপেক্ষা করেন গরু রপ্তানি বন্ধ করার কারণে ভারতে আন্দোলন শুরু হবে। ভারতে গরুর কারণে তাদের চামড়াজাত শিল্পে ধস নামবে। শুধু শুধু গরু আনতে গিয়ে আপনারা গুলি খেয়ে মরবেন না।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মায়ানমারের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্ত সমস্যা নেই। শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা, রোহিঙ্গা নেই সমস্যাও নেই। অনেকেই বলেন ভারত ভাগ হয়েছে, আসলে ভারত ভাগ হয়নি; ভাগ হয়েছে পাঞ্জাব আর বেঙ্গল। বেঙ্গল ভাগ হওয়ায় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। একটি বাড়ির মাঝখান দিয়ে সীমান্ত। যতই কাঁটাতারের বেড়া থাকুক; বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ম্যানেজমেন্ট করা কঠিন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পিএসও এবং বিজিবির সাবেক ডিজি লে. জে. মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বর্ডার এলাকা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত না হওয়ায় মানুষ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আর বাংলাদেশের এসব জনগোষ্ঠীকে ভারতের মানুষ ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, গরু চোরাচালানসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধ করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতীয় সীমান্তে চোরাচালান হয়। এই সঙ্গে বিজিবিকে পিলার টু পিলার যেতে হবে। সীমান্তে ড্রাগ টেস্ট করার মেশিন থাকতে হবে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে; এটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্র কেমন সম্পর্ক চায় এটা বুঝতে হবে। বর্তমান সরকার ভারতের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে সব ধরনের কাজ করছেন, সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ভারতের কাছ থেকে আমরা কিছুই পাচ্ছি না। ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিয়ে ভারতের নিরাপত্তা পর‌্যন্ত নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক তৈরিতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের হাই কমিশনের কর্মকর্তা 'অথর্ব' উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী রশিদ বলেন, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে যে কর্মকর্তা রয়েছেন তারা ভিআইপিদের চিকিৎসা করানো, শপিং করানো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সীমান্ত সমস্যা, পাচার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়ন; এগুলো বিষয়ে তাদের সময় নাই। হাই কমিশনে যারা আছেন, তারা শুধু অথর্ব নয়, তারা ব্যবসা ছাড়া কিছু বোঝে না।

সভায় অন্য বক্তরা বলেন, ভারতকে আমরা সব দিক থেকে সুবিধা দিচ্ছি বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছি না। ভারত বাংলাদেশকে সন্দেহ করে, বাংলাদেশ ভারতকে সন্দেহ করে। এভাবে সম্পর্কের উন্নয়ন হয় না। দিন দিন সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়ে চলছে। সামনে কোরবানির ঈদ, সীমান্তে গরু চোরাচালান বেড়ে গেছে। আমাদের গরু তো দরকার নেই, সরকারকে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে।

মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সোহাব এনাম খান। তিনি সীমান্ত হত্যা, ভারতে অনুপ্রবেশকারীসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিসংখ্যানসহ গবেষণামূলক তথ্য তুলে ধরেন।  

বিপিএসএ’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম, সাবেক কূটনৈতিক মোহাম্মাদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এমসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।