ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগবঞ্চিত মেহেন্দিগঞ্জ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
জেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগবঞ্চিত মেহেন্দিগঞ্জ সরাসরি সড়ক নেই। তাই এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয় জেলাসদরে; ছবি: বাংলানিউজ।

বরিশাল:‘ধান-নদী খাল/ এই তিনে বরিশাল’। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অংশ হিসেবে বরিশালেও হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। জেলা সদরের সাথে প্রতিটি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত। ব্যতিক্রম কেবল মেহেন্দিগঞ্জ।

নদী আর খালবেষ্টিত বরিশালের সড়কপথকে জুড়তে নির্মিত হয়েছে সেতু-ব্রিজ-কালভার্ট। আর যেখানে এগুলো নেই সেখানে রয়েছে ফেরি।

এভাবে সহজতর করা হয়েছে মানুষের চলাচলকে।

তবে বরিশালের ১০ উপজেলার মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চিত্র একটু ভিন্ন। স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় অর্ধেক শতাব্দী পার হতে চললেও এ উপজেলার সাথে বরিশাল বিভাগীয় সদর বা আশপাশের উপজেলাগুলোর সাথে সরাসরি কোনো সড়কপথ এখনো হয়নি।

ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাথে চরএককরিয়া, উলানিয়া, মেহেন্দিগঞ্জ সদর, চানপুর ও দড়িচর খাজুরিয়া নামের ৫ টি ইউনিয়নের রয়েছে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। বাকি ১০টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কোনো না কোনো নদী পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে আসতে হয়। তবে খেয়ায় পাড়ি দিয়ে নদী পার হতে হলে এখন আর বৈঠার নৌকা নয়, চড়তে হয় ইঞ্জিনচালিত নৌকায়(ট্রলার)।

শ্রীপুর ইউনিয়ন থেকে দ্রুত মেহেন্দিগঞ্জ সদরে আসতে হলে করতে হয় দুটি খেয়া পারাপার। আর বাকিগুলোর মধ্যে আন্ধারমানিক, লতা, বিদ্যানন্দপুর, ভাষানচর, চরগোপালপুর, জাঙ্গালিয়া, আলিমাবাদ, জয়নগর ও গোবিন্দপুর ইউনিয়ন থেকে সদর উপজেলায় আসতে একটি করে খেয়া পার হতে হয়। এর মধ্যে গোবিন্দপুরে ইউনিয়নে যেতে ভয়ঙ্কর মেঘনা ৪০ মিনিট ধরে খেয়ায় পাড়ি দিতে হয়। আর যখন নদী উত্তাল থাকে সেসময় খেয়া পারাপারও বন্ধ থাকে। তখন উপজেলা সদরের সাথে সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের যোগাযোগ আক্ষরিক অর্থেই প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ থাকে বললেই চলে।

অপরদিকে বরিশাল সদর থেকে গোবিন্দপুরসহ হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সরাসরি সব ইউনিয়নেই লঞ্চযোগে যাওয়া সম্ভব। আবার বরিশাল থেকেও মেহেন্দিগঞ্জের ভাষানচর, শ্রীপুর, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে খেয়া পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এর বাইরে হিজলা উপজেলার সাথে সংযুক্ত জয়নগর নামের ইউনিয়নে বরিশাল থেকে যেতে হলে একটি ফেরি পার হতে হয়।

এসব ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাট-বাজারের সমস্যা না থাকলেও নদীভাঙন কবলিত এসব এলাকায় মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নিজ কিংবা পাশের ইউনিয়নের বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে সহজেই। বিপত্তি দেখা দেয় কলেজে ওঠার পর। কলেজে উঠলে তাদের যেতে হয় উপজেলা সদর কিংবা বরিশালে। এর বাইরে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ভালো কোনো সুযোগ এখানে নেই। বিশেষ করে গর্ভবতী কিংবা বয়স্ক মুমূর্ষু রোগীকে ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে উপজেলা সদর কিংবা বরিশালে নিতে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় কষ্ট। এসবক্ষেত্রে উপজেলার ১০ ইউনিয়ন থেকে ধীরগতির ট্রলার ও লঞ্চ অথবা উচ্চ ব্যয়নির্ভর দ্রুতগতির স্পিডবোট ব্যবহার করতে হয়। একইভাবে কোনো গ্রামে সংঘর্ষ কিংবা হত্যার ঘটনা ঘটলে থানা পুলিশকেও আসতে হয় অনেক কষ্ট করে।

সরাসরি সড়ক নেই।  তাই এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয় জেলাসদরে; ছবি: বাংলানিউজ।  তবে সবকিছুতেই ভয়ঙ্কর আর উত্তাল মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, লালখারাবাদ, স্রোতস্বিনী মাসকাটাসহ বিভিন্ন নদী পাড়ি দিতেই হবে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মালেক খান জানান, নদীর প্রাকৃতিক অবস্থান, আকৃতি, খেয়ার ধারণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ছোট-ছোট ট্রলারগুলো যাত্রীবহন করে থাকে। স্বাভাবিক সময়ের পাশাপাশি বর্ষাকালেও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীগুলো পাড়ি দিচ্ছে মানুষ । আর সারাক্ষণ ঢেউয়ে উত্তাল এসব নদীতে স্পিডবোট অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর  কতো যে দুর্ঘটনা ঘটে তার সঠিক হিসাব দুর্গম অঞ্চলে কেই বা রাখে! সেতুসংযোগ-ফেরি কিংবা সরাসরি সড়কপথের অভাবে আজ পর্যন্ত উপজেলা সদর থেকে অন্য কোনো উপজেলার সাথে স্থলপথে সরাসরি কোনো যোগাযোগের সুযোগ গড়ে ওঠেনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, নদীবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জে বরিশালের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার পর বরিশালের তালতলী ব্রিজ হয়ে শায়েস্তাবাদ, কদমতলীতে রাস্তা তৈরি করা হবে। পাশাপাশি পুরাতন হিজলা থেকে মেহেন্দিগঞ্জের দাতপুরেও ফেরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। এতে বরিশাল থেকে মুলাদী-হিজলা হয়ে সড়কপথে ফেরি পার হয়ে মেহেন্দিগঞ্জ আসা যাবে।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি করা হচ্ছে এবং আরও করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প পাশ হলেই কাজ শুরু হয়, তবে উপর্যুপরি নদী ভাঙনের ফলে বারবার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়। ভেঙে যাচ্ছে নির্মিত স্থাপনাসহ রাস্তাঘাটও ভেঙে যাচ্ছে নদীভাঙনের কারণে।
বাংলাদেশ সময়:১২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।