বাসগুলোর নিচের অংশে লতাপাতা ও আগাছা এবং ওপরের অংশ বৃক্ষরাজিতে বন্দি। আগাছায় ঢেকে থেকে থেকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসব অত্যাধুনিক বাস আর ঢাকা নগরীতে দেখা যায় না। তবে ৫০টির মধ্যে একটিমাত্র বাস এখনও ধুঁকে ধুঁকে চলছে মিরপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত। মিরপুর দ্বিতল বাসডিপো থেকে বার বার মেরামত করে কোনোমতে সচল রাখা হয়েছে সেটি।
ভলভো’র এই শেষ চিহ্নটিও দ্রুতই মুছে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি বন্ধ হলেই শেষ হয়ে যাবে সরকারি তহবিল ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) অর্থায়নে কেনা বিলাসবহুল বাসের গল্প। এরপরে সেগুলো শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে।
বুধবার (০৯ আগস্ট) মিরপুর ডিপো ঘুরে দেখা গেছে, বিলাসবহুল বাসগুলো ডাম্পিং করে রাখা হয়েছে। সেখানকার ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা ভলভোটি সুপ্রিম কোর্টের স্টাফ বাস হিসেবে চলছে। সেটিকে রানিং রাখতে সব সময়ই মেরামত করা হচ্ছে। কখন বন্ধ হয়ে যাবে, কে জানে!’
বাকি ৪৯টি ভলভো প্রসঙ্গে ম্যানেজার বলেন, সেগুলোকে আর সচল করা যাবে কি-না- সংশয় রয়ে গেছে’।
সাধারণত চলমান ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে অনিয়মের তদন্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। প্রকল্প তদন্তের সরকারি সংস্থাটিও ভলভো বাসগুলোর কোনো খবর রাখে না। সেগুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনও করেনি।
আইএমইডি’র পরিবহন শাখার সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ তানভীর আক্কাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভলভো বাসগুলোর সর্বশেষ তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনেক আগে কেনায় সেগুলো এখন রাজস্বের আওতায় চলে গেছে। এর হিসাবও তাই আমাদের কাছে রাখা হয় না’।
তবে আট মাস আগে প্রায় আট বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হতে যাওয়া বাসগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছিলো বিআরটিসি। এখন সে উদ্যোগও থেমে গেছে।
বিআরটিসি সূত্র জানায়, ৫০টি বাস কেনা হয় ৭০ কোটি টাকায়। আর ৩৬ কোটি ৬২ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বিআরটিসি’র ৫০টি ভলভো দ্বিতল বাস মেরামত’ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ হিসেবে প্রতিটি ১ কোটি ৪ লাখ টাকা মূল্যের বাস মেরামতে ব্যয় হতো ৭৪ লাখ টাকা করে। ফলে কেনা ও মেরামত মিলিয়ে এক একটি ভলভো’র মোট ব্যয় দাঁড়াতো ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তারপরও মেরামত করলে আরও কিছুদিন নাগরিক সেবা দেওয়া যেতো।
বিআরটিসি’র ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) মেজর মো. মাহমুদুর রহমান বাংলানউজকে বলেন, ‘৫০টি ভলভো’র মধ্যে মাত্র একটি সচল ছিলো। সেগুলো মেরামতের যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এখন সেটি থেমে আছে। আদৌ ওই বাসগুলো আর মেরামত হবে কি-না- সন্দেহ রয়ে গেছে’।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম আমলে বাসগুলো কেনা হয় ১৯৯৯ সালে। প্রতিটি বাসের আসন সংখ্যা ১২০টি। বিশাল আকৃতির বাসগুলোতে আরও ৪০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। একেকটি বাস পাঁচটি মিনিবাসের সমান যাত্রী বহন করতে সক্ষম।
প্রতিটি বাসে বছরে সাত লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন ও ছয় হাজার কিলোমিটার চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ভালো থাকলেও প্রতিটি বাসে বছরে তিন লাখ ১৪ হাজার ৮০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটারই চলেছে বাসগুলো। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বিকল হয়ে ৭ থেকে ৮ বছর আগে থেকে পরিত্যক্ত রয়েছে এসব বাস।
সুইডেন থেকে আমদানি করা বাসগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। কিন্তু ৯/১০ বছরও চলতে পারেনি রাস্তায়।
অভিযোগ রয়েছে, বাসগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে বরাদ্দকৃত ৯ কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার হয়নি। ফলে অচল হয়ে গেছে ভলভোগুলো। এতে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি লাভের বদলে হয়েছে লোকসান।
বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভলভো মেরামতের উদ্যোগ একবার নিয়েছিলাম। সেটি আর হয়নি। অন্যভাবে মেরামতের ব্যবস্থা করবো। কিভাবে এগুলো সচল করা যায়, সে চিন্তা-ভাবনা করছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর