ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌকা বানানোর ধুম লেগেছে সাভারের নামাবাজারে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
নৌকা বানানোর ধুম লেগেছে সাভারের নামাবাজারে! নৌকা বানানোর ধুম লেগেছে সাভারের নামাবাজারে!

সাভার (ঢাকা) : দেশের নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দেওয়ায় নৌকার চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। প্রতিবছরই এমনটা হয়। বর্ষা মৌসুম এলেই ব্যস্ত সময় পার করেন নৌকার কারিগরেরা।

সাভারের নামাবাজারে এখন নৌকা বানানোর ধুম লেগে গেছে। বেশ খানিকটা দূর থেকেই আপনার কানে ভেসে আসবে হাতুড়ি-বাটালের শব্দ।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দল বেঁধে কাজ করছেন নৌকার কারিগরেরা।

সাভার-আশুলিয়ার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ও কাছেপিঠের জেলাগুলো থেকে আসা সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারদের চাহিদামাফিক অর্ডার নিয়েছেন কারিগরেরা। এখন সেসব চাহিদা মেটাতে নৌকা বানানোর এই তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন তারা। বর্ষার ভরা মৌসুম হওয়ায় দম ফেলারও ফুসরত নেই তাদের।

এখানকার বাজারের নৌকা আশপাশের এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রির জন্য গাজীপুর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জসহ বহু দূরদূরান্তের এলাকার বাজারেও যায়।
নৌকা বানানোর ধুম লেগেছে সাভারের নামাবাজারে!
নৌকার কারিগরদের একজন মাধব চন্দ্র সরকার। বাংলানিউজকে তিনি জানালেন, গত দু’বছর ধরে নৌকার চাহিদা আগের চেয়ে একটু বেশি। ভরা মৌসুমে দিনরাত কাজ করতে হয়। দম ফেলারও সময় নেই। এখন কেবল কাজ আর কাজ। এক দিনে সর্বোচ্চ ৫টি পর্যন্ত নৌকা বনাতে পারেন বলেও জানান তিনি। প্রতিটি নৌকার জন্য মজুরি পান ৩৫০ টাকা। গত প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে তিনি নৌকা বানানোর এই কাজ করে চলেছেন।

এছাড়া এই কারিগর আরও জানান, অন্যান্য বছর তাদের বানানো নৌকা স্থানীয় বাজারে বেশি বিক্রি হলেও এবার গ্রীষ্মকাল থেকেই টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বেড়ে গেছে সবখানে। এজন্য আশপাশের জেলাগুলো থেকেও প্রচুর ক্রেতা ও পাইকার আসছেন এবার নৌকা কিনতে।

এবাজারে নৌকা কিনতে এসেছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার আবুল হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন,  বর্ষা মৌসুম এলেই অনেক জায়গায় নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। বাড়ি কিছুটা নিচু এলাকায় হওয়ায় বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। তখন নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোনো উপায় থাকে না।
নজরুল ইসলাম নামের একজন মাদ্রাসাশিক্ষক জানান, বাড়ি থেকে মাদ্রসায় যাওয়ার সড়কটি পানিতে ডুবে যাওযায় তিনি এই বাজারে নৌকা কিনতে এসেছেন। এছাড়া নৌকা বেচাকেনার জন্য এই বাজারটি ঐতিহ্যবাহী। এজন্যই তিনি এখানে নৌকা কিনতে এসেছেন।
নৌকা বানানোর ধুম লেগেছে সাভারের নামাবাজারে!
সাধারণত ১৫ ফুট সাইজের নৌকার চাহিদা বেশি। আকারভেদে প্রতিটি নৌকা ২ হাজার থেকে শুরু হয়ে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানান নৌকা ব্যবসায়ীরা। পানি বাড়ার সাথে সাথেই বাড়ে নৌকার চাহিদা।

নৌকা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় চাম্বুল কাঠ। এ কাঠ সাধারনত বরিশালের স্বরুপকাঠি খেকে আনা হয় বলে বাংলানিউজকে জানান নৌকা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুমন। সবকিছু মিলিয়ে ১৫ ফিট সাইজের একটি নৌকা বানাতে প্রায় ১৮০০-১৯০০ টাকা খরচ হয়। তবে আশানুরূপ মানুফা না হওয়ায় এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

সুমন আরো জানান, নামাবাজারে এখন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো নৌকা তৈরির কারিগর আছেন। আর নৌকা ব্যবসায়ী আছেন অন্তত ১৫ জন।

এই ব্যবসায়ী আরও জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে কাঠের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, কারিগরদের মজুরি বৃদ্ধিসহ নৌকা বানাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মুনাফা হয় না। তাই সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ পেলে নৌকা ব্যবসায়ীরা আরো সাবলীলভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।