ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চরাঞ্চলের দুধেই চাহিদা মেটে শহরের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
চরাঞ্চলের দুধেই চাহিদা মেটে শহরের মেঘনা পাড়ি দিয়ে চরাঞ্চলের দুধ যাচ্ছে শহরে। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরের মিষ্টির দোকান ও বাসা-বাড়িতে প্রতিদিন ২-৩শ’ মণ দুধের চাহিদা থাকে। এ চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হয় জেলার ৮ থেকে ১০টি চরাঞ্চলে উৎপাদিত দুধ দিয়ে।

এ দুধ বিক্রিতে জড়িত চরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও। তারা কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহের পর ট্রলারযোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে শহরে নিয়ে আসেন, বিক্রি করেন পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

নদীতীরে চরের বড় বড় মাঠে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ঘাস খেয়েই বাঁচে গবাদিপশু ও ছাগল।  ছবি: বাংলানিউজ ফলে কৃষিকাজ ও মাছ শিকারের পাশাপাশি গবাদিপশু পালন ও দুধ উৎপাদন-বিক্রিও চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস।

মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও হাইমচর উপজেলায় প্রায় ৩০টি চর রয়েছে। এসব চরের বড় বড় মাঠে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ঘাস খেয়েই বাঁচে গবাদিপশু ও ছাগল। ফলে পশুপালনে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচও নেই।

সদর উপজেলার রাজ রাজেশ্বর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শত শত গরু মাঠে মাঠে ঘাস খেয়ে বেড়ালেও সেগুলোকে চড়াতে নেই কোনো রাখাল। কৃষকরা সকালে ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই চাহিদামতো ঘাস খাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সন্ধ্যা হলে ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে। প্রায় সব কৃষক পরিবারই নিজ নিজ বাড়িতে ৮ থেকে ১০টি করে গবাদিপশু পালন করছে।

ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের দুধ ব্যবসায়ী সুরজ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে দুধ একটু কম থাকে। তবে শুকনো মৌসুমে দ্বিগুণ হয়। চলমান বর্ষা মৌসুমে শহরের বড় স্টেশন মূলহেড, ১০নং খেয়াঘাট, ট্রলারঘাট, ভূঁইয়ারঘাট ও মদিনা মসজিদ ট্রলারঘাটে চরাঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৫০ মণ দুধ আসছে। আমরা এসব দুধ শহরের বাসা-বাড়িসহ মিষ্টির দোকানগুলোতে নিয়মিত দিয়ে আসছি। তবে বড় বড় মিষ্টির দোকান মালিকরা একদিন পর পর টাকা পরিশোধ করেন’।

একই ইউনিয়নের চরমুকন্দী গ্রামের কৃষক নূর হোসেন জানান, চরাঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদেই গবাদিপশু পালন করেন। তবে এখানে বাণিজ্যিকভাবে কেউ উদ্যোগ নিয়ে গাভি পালন করেন না।

চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে গরু পালন করা হয়।  ছবি: বাংলানিউজওই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শহরে যে পরিমাণ দুধের চাহিদা, সে আলোকে চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে দুধের ডেইরি ফার্ম করা যায়। তাহলে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দুধের চাহিদাও মিটবে।

ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজে জড়িত। পাশাপাশি গবাদিপশু পালন ও মাছ শিকার করেও জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। নিজেদের উৎপাদিত খাবার থেকেই দৈনন্দিন চাহিদা মেটান চরবাসী। এখানে কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সরকার পরিকল্পিতভাবে চরাঞ্চলগুলোকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

চরাঞ্চল থেকে শহরে সরবরাহ করা হয় চাহিদার সিংহভাগ দুধ।  ছবি: বাংলানিউজহাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে অনেক বড় বড় চর রয়েছে। এসব চরে অনেক গবাদিপশু পালন করা হয়। চরাঞ্চলে উৎপাদিত অধিকাংশ দুধ কৃষকরা উপজেলা সদর ও চাঁদপুর শহরে বিক্রি করেন। কৃষিভিত্তিক চরাঞ্চলকে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পেশ করেছি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে চরাঞ্চল থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।