ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘ছওয়া-পওয়া নিয়্যা নৌক্যাত করে বাপের বাড়িত যাবার নাগছি’

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
‘ছওয়া-পওয়া নিয়্যা নৌক্যাত করে বাপের বাড়িত যাবার নাগছি’ বন্যায় বাড়িঘর ছাড়ছেন মানুষজন- ছবি: বাংলানউজ

কুড়িগ্রাম: ‘ধরলা নদীর পানি উচলি বাড়ি-ঘর ডবি গেইচে। স্বামীর বাড়িত থাকার কোনো জাগা নাই। ছওয়া-পওয়া নিয়্যা নৌক্যাত করি বাপের বাড়ি যাবার নাগছি। কতখান আর পানির মইধ্যে থাকি।’

শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা অববাহিকার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি এলাকায় বন্যার পানিতে প্লাবিত মঞ্জুরা বেগম (৪০) এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।

পাঁচদিন ধরে অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ধরলা নদীর পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় এই বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করছে।

শনিবার (১২ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৩ (২৭.১৩ বিপদসীমা ২৬.৫০) সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১২ ঘণ্টায় ধরলার পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্লাবিত হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
 
ধরলা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়েছে। এসব এলাকায় দুর্ভোগকে সাথী করে হাটু-কোমর পানি ভেঙে বা নৌকায় করে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষজনকে।  
বন্যায় বাড়িঘর ছাড়ছেন মানুষজন- ছবি: বাংলানউজকুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা অববাহিকার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যকুমোরপুর এলাকার দেলদার আলী (৭০), আনছার আলী (৬৫) বাংলানিউজকে জানান, রাস্তা পাকা রাস্তা সউগ ডুবি গেইচে বাহে। পায়ে হাটি যাওয়া-আইস্যার কোনো উপায় নাই। কোনো জাগাত হাটু পানি, আবার কোনো জাগাত কোমর ও বুক পানি। জীবনের ঝুঁকি নিয়্যা নৌকা বা কলাগাছের ভেলাত যাওয়া আইস্যা করবার নাগছি।

কুড়িগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, জেলায় দ্বিতীয় দফা ৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আল আজাদ বাংলানিউজকে জানান, নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বাংলানিউজকে জানান, প্রবল বর্ষণ ও ঢলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যানসহ সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি মানুষের কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা তা দেখছেন এবং আমাদের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আসলে সবধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবো, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৬১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।