হাত দিয়ে পর্দা সরাতেই মুচকি হাসি দিয়ে পাশে (মাঝে) বসার সুযোগ করে দিলেন ভদ্র মহিলা। থ্যাংকস বলতে গেলেও গলাতেই মিলিয়ে গেলো শব্দ।
প্রথমে চালকের একজন একজন হাঁকে নিজেকে যতটা সৌভাগ্যবান ভেবেছিলাম এবার ততটাই অসহায় মনে হলো, না পারছি না বলতে, আর সাহস কুলাচ্ছিল না তাদের সঙ্গে ৪১ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার। দোটানার মধ্যেই উঠলাম মাঝের সিটে।
তখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলাম ভদ্র মহিলার মুচকি হাসির কারণ। লোকাল বাস ও অটোতে সিট শেয়ার করতে হলে রোগাদের একটু বেশিই খাতির করা হয়। এখানেও সেই কদরই পেলাম, আর সেই সৌজন্যে ভদ্র মহিলার মুচকি হাসি পেয়েছিলাম। আমার মতো রোগা চেহারার সহযাত্রী পাওয়ায় তাদের মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল। কারণ আরেকজন যাত্রী যদি হেলদি হতো তাহলে কি হতো সে শঙ্কা নিশ্চয় তাদের ছিল।
দু'জন বসার পর খুব সামান্য স্থানই অবশিষ্ট ছিল। আগে থেকে বসা দু'জনের গায়ে গায়ে হালকা স্পর্শ হচ্ছিল। বিশেষ করে ভদ্র মহিলা একটু বেশিই হেলদি। একজনে প্রায় দু'জনের জায়গা দখল করেছেন। সামনে-পেছনে হয়ে বসতে হলো ঠিক ট্রাকে বস্তা বোঝাই করার মতো।
একটু পথ যেতেই মহিলা ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন আমার ত্রাহী অবস্থা, শুধু ক্ষণ গুণছিলাম কখন ভবানীগঞ্জে পৌছাই।
ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারিদের সঙ্গে ভ্রমণ করা কতটা বিপদজনক হতে পারে তা লোকাল বাসে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে তারা সহজেই অনুমান করতে পারছেন।
রাজশাহীতে পাইপ লাইনে গ্যাস চলে আসার পর এখানকার জীবনযাত্রা অনেক বদলে গেছে, আগে ভবানীগঞ্জ যেতে হলে লোকাল বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ চেয়ে থাকতে হতো। এখন সিএনজি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাসে যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা, আর অটোরিকশা মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে দিচ্ছে।
শুধু এই রুটে ৪৪২টি অটোরিকশা চলাচল করছে। আর পুরো রাজশাহী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৮ শতাধিক। তবে তাদের কারোরই রেজিস্ট্রেশন নেই। বাস মালিকরা নাকি আটকে রেখেছে বলে দাবি করেন চালক বাবুল।
এখন পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলাচল করছে। এজন্য মাসে তিন'শ ও দৈনিক ৫০ টাকা হারে জমা দিতে হয়।
অটোরিকশায় সামনে যাত্রী নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রত্যেকে সামনে দুজন করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। পারলে রিজার্ভ নেয়া যায়, আর না হলে তাদের নির্দিষ্ট রুটে ৫ জন যাত্রী হলে তবেই ছাড়বে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
পথের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে যাত্রী চালক সকলেই অখুশি।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এসআই/জেডএম