আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী দুই-তিন দিনে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সর্বশেষ সকাল ৯টায় গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য দিয়ে বলছে, ৯০টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৮১টির। হ্রাস পেয়েছে ৬টি। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৭টি কেন্দ্রে। ১০০ মি.লি. এর উপরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে ১৬টি স্টেশনে। আর ৫০ মি.লি. এর উপরে হয়েছে ৩৮টি কেন্দ্রে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা থেকে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১৫-১৬ আগস্ট পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। পানি বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
উত্তরাঞ্চলসহ উজানে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান সাজ্জাদ হোসেন।
পানি বৃদ্ধি পেয়েছে
ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নমীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। এছাড়া ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আর সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
সকাল ৯টার তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ সে.মি., ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি ২৯ সে.মি., যমুনেশ্বরীর পানি বদরগঞ্জে ১৩২ সে.মি., যমুনায় বাহাদুরবাদঘাটে ৬৩ সে. মি., সিরাজগঞ্জে ৪৭ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর পানি ২৬১ সে. মি., সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে ৫১ সে. মি., সুনাসমগঞ্জে ২৩ সে. মি., কুশিয়ারার পানি শেওলায় ১২ সে. মি., সারিঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি ৮৪ সে. মি. উপর দেয় প্রবাহিত হচ্ছে।
মনু রেলওয়ে ব্রিজে মনু নদীর পানি ৩৬৮ সে. মি., খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে ২২১ সে. মি., হবিগঞ্জে ৪৭০ সে. মি., ধলাই নদীল পানি কমলগঞ্জে ২৭৮ সে. মি., নাকুগাঁওয়ে ভুগাই নদীরি পানি ৩২০ সে. মি., সোমেশ্বরী নদীল পানি দুর্গাপুরে ১০০ সেমি এবং কংস নদীর পানি ১০৫ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিপদসীমার উপরে পানি
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ মি.লি., ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি ২৫ মি. লি., বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীর পানি ৬ মি. লি., বাহাদুরবাদে যমুনা নদীর পানি ৪ সে. মি., সিরাজগঞ্জে ১০ সে. মি., ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর পানি ৬৫ সে. মি., কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি ৭৮ সে. মি., সুনামগঞ্জে ৭০ সে. মি., শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ১২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারিঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার ৪৯ সে. মি., মনু রেলওয়ে ব্রিজে মনু নদীর পানি বিপদসীমার ৭ মি. লি., খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৫ সে. মি., হবিগঞ্জে ১৯৫ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সে. মি., নাকুয়াগাঁওয়ে ভুগাই নদীর পানি বিপদসীমার ২৩৬ সে. মি., দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সে. মি. এবং জারিয়াজঞ্জাইলে কংষ নদীর পানি বিপদসীমার ১০৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি বা অধিক) বর্ষণ হতে।
আর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।
রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আগামী তিন দিনে (৭২ ঘণ্টা) বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ